হতাশা ও দুঃখ কাটিয়ে ওঠার ১৫ টি উপায় !! Bengali Guide for Fighting Depression!!

বর্তমান সময়ে যেকোনো বয়সের মানুষের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে হতাশা, জন্ম নিচ্ছে ডিপ্রেশন। আঘাত সামলাতে না পেরে জীবন শেষ করার পথে এগিয়ে যাচ্ছে বহু মানুষ। লড়াই করার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলছে, হারিয়ে ফেলছে নিজের প্রতি বিশ্বাস।

সহজেই মানুষকে গ্রাস করে ফেলছে দুঃখ, আমরা ভুলে যাচ্ছি জীবন একটা কঠিন যুদ্ধ যেখানে হাজার রকম প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হবে তবুও এগিয়ে যেতে হবে। অপরের কাছে না হোক, জয়ী হতে হবে নিজের কাছে।

কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করলে অনেকাংশে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে দুঃখ এবং হতাশার হাত থেকে। হতাশা এবং দুঃখ কাটিয়ে ওঠার উপায় নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো

1.মেডিটেশন করুন

শরীরে দুশ্চিন্তা সৃষ্টিকারী হরমোনের পরিমাণ কমিয়ে ফেলে য়োগা এবং ধ্যান,  বাড়িয়ে তোলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, শরীরের সাথে সাথে মনেও আসে শান্তি, সতেজতা। সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন মেডিটেশন করলে তা মনকে হতাশ হওয়ার থেকে মুক্ত রাখতে পারে।

2.আলস্য ছেড়ে নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখুন

হতাশা কাটাতে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে কাজে, চুপচাপ বসে থাকলে সময় নষ্ট করার পাশাপাশি মনে আসবে নানান চিন্তা, যার থেকে ধীরে ধীরে জন্ম নেবে হতাশা, তাই সবসময় চেষ্টা করুন নিজেকে কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত রাখার।

3.মনের কথা খুলে বলুন

আমরা অনেকেই জীবনের, প্রতিদিনের সামান্য কিছু ঘটনা হয়ত কাউকে বলি, বাকি সবটাই চেপে রাখি নিজের অন্তরে। যারা মনের কথা মনে রেখে দেয় এবং নিজের দুঃখ, কষ্ট গুলোকে সহজে প্রকাশ করতে পারে না তারা সহজেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে,  তাই ভালো লাগা, খারাপ লাগা সবকিছুই কারোর সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করুন,এতে আপনার মনও হালকা হবে এবং দুঃখগুলো কম হবে।

4.প্রাণ ভরে হাসুন

যখনই ইচ্ছে হবে হাসুন, প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে।  হাসি-ঠাট্টার ফলে দেহের সংবহনতন্ত্র বা বিভিন্ন নালীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই গম্ভীর না থেকে হাসুন, মন ভালো থাকলে হতাশা আসবে না।

5.শিশুদের সাথে সময় কাটান

অনেক সময় আমাদের মন খারাপ থাকলে আমরা একটা ঘরে নিজেদের আবদ্ধ করে রাখি, সেই সময় নিজেকে বদ্ধ না রেখে শিশুদের সাথে সময় কাটান, মন এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে।

6.নিয়মিত ব্যায়াম করুন

ব্যায়াম আমাদের শরীরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমরা সবাই জানি। সবচেয়ে সহজ ব্যায়াম হল হাঁটা। হাঁটলে শরীর ভালো থাকে আর মনও,  সকালে সবুজের মাঝে মর্নিং ওয়াক করে দেখুন, হতাশা কমে যাবে।

7.নিজেকে সময় দিন

আমরা ব্যস্ত জীবনে কাজের থেকে অবকাশ খুব একটা পাই না,কিন্তু তার মধ্যে থেকে সময় বের করতে হবে নিজের জন্য। মাঝেমাঝেই একটু সময় পছন্দের কাজ করুন, সিনেমা দেখা, গান শোনা, পছন্দের রান্না করা, সাহিত্যচর্চা,  হাতের কাজ করা যার যেমনটা পছন্দের সেটা করুন , দেখবেন দুঃখ ভুলে আনন্দে থাকবেন সহজেই।

8.পর্যাপ্ত ঘুম

যারা হতাশায় ভোগেন তারা অনেক সময়ই রাতে দেরিতে ঘুমান, অল্পসময় ঘুমের কারণে যেমন শরীরে প্রভাব পড়ে তেমনি মনের হতাশা আরও বৃদ্ধি পায়।

সুস্থ থাকতে হলে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। তাই রাতে অযথা দেরিতে না ঘুমিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে, পর্যাপ্ত ঘুম হলে শরীর ও মন অনেক রিলাক্স থাকে৷

10.ডায়েরি লেখা অভ্যাস করুন

সারাদিনের ক্রিয়াকলাপের সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনও লিখে রাখতে পারেন ডায়েরিতে। মানসিক চাপ, যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পেতে ডায়েরি লেখা একটি সুফলদায়ক উপায়। চাপা যন্ত্রনা যা মুখ ফুটে কাউকে জানাতে পারছেন না, বা ভাবছেন কেউ আপনার পরিস্থিতি বুঝবে না, যা যা মনে থাকবে লিখে ফেলুন ডায়েরিতে।

11.অপ্রাপ্তির তুলনায় প্রাপ্তিগুলোকে মনে রাখুন

আমরা প্রত্যেকেই জীবনে যা চাই তা সব সময় পাই না, আর না পাওয়া গুলোকে জীবনের ব্যর্থতা হিসেবে ধরে নি। আমরা প্রাপ্তির তুলনায় অপ্রাপ্তি কে বেশি গুরুত্ব দিই, কিন্তু আমাদের জীবনে যা কিছু রয়েছে যা কিছু প্রাপ্তি সে গুলোকে সব সময় স্মরণ করে আমাদের এগিয়ে চলা উচিত। তাতে আমাদের হতাশা অনেক কম হবে।

12.বন্ধু, পরিবারের সাথে সময় কাটান

অনেক ক্ষেত্রেই হতাশা বা দুঃখ জন্ম নেওয়ার বড় কারণ হলো একাকীত্ব, একাকীত্ব থেকে মানুষ ভেঙে পড়ে। তাই যখনই সময় পাবেন বন্ধু এবং পরিবারের মানুষদের সাথে সময় কাটান, যারা আপনাকে আনন্দে থাকতে সাহায্য করে এমন মানুষের সাথে সময় কাটান।

13.নিজেকে ভালোবাসুন

যেমনি পরিস্থিতি আসুক না কেন এখনো নিজেকে ছোট ভাববেন না, নিজেকে ব্যর্থ ভাববেন না, হীনমন্যতায় ভুগবেন না, মনে রাখবেন ভগবান তাকেই সাহায্য করে যে নিজেকে সাহায্য করে। তাই সবার আগে নিজেকে ভালবাসুন, নিজেকে সময় দিন। নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছার দাম দিন দেখবেন হতাশা কাছেও আসবে না।

14.পজেটিভ থিংকার হতে হবে

আমরা এমন অনেক মানুষকে দেখি যারা খুব সহজেই হাল ছেড়ে দেন, কোন কিছু শুরু করার আগেই বিফল হওয়ার কথা ভাবেন। ভাবেন তাদের দ্বারা কিছু হবে না এবং তারাই জীবনে বেশি হতাশায় ভোগেন।

জীবনে সাফল্য ব্যর্থতা দুই থাকবে, তবে প্রথম থেকেই নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে রাখলে কোন কাজেই সফলতা আসবে না, সব সময় ইতিবাচক চিন্তা ধারা রাখতে হবে।

15.আত্মবিশ্বাসী হতে হবে

বর্তমান সময়ে যখন বেশিরভাগ মানুষ হতাশায় আচ্ছন্ন, ছোটো থেকে বড় সকলের জীবনে অনেক দুঃখ, তখন স্বাভাবিকভাবেই মানুষ নিজের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, যার ফলে হতাশা আরো বড় মাত্রা ধারণ করে। তাই জীবনের সমস্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের উপর বিশ্বাস হারালে চলবে না, হতে হবে আত্মবিশ্বাসী। তবেই দুঃখকে জয় করে জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে।

16.বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন

বই জীবনের সবচেয়ে বড় সঙ্গী। বই হলো এমন সঙ্গী যে আপনার বিভিন্ন পদক্ষেপে আপনাকে এগিয়ে চলতে সহায়তা করবে এবং তার বিনিময় আপনার থেকে কিছু চাইবে না, নিঃস্বার্থভাবে আপনাকে শুধু দিয়ে যাবে। কাজের ফাঁকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের বই পড়ুন। এতে যেমন আপনার জ্ঞান বাড়বে পাশাপাশি আপনার মনে হতাশা স্থান নিতে পারবে না। দুঃখ হলে হাসির বই পড়ুন, মন ভালো থাকবে। আর মন ভালো থাকলে শরীরও সুস্থ থাকবে।

Leave a Comment