সোশ্যাল মিডিয়ার মার্কেটিং এর সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ আলোচনা কর? পর্ব-৩

বর্তমান সময়ে পৃথিবীকে আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে যে প্রযুক্তি তার নাম দেওয়া হয়েছে

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া।এই সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের পুরোনো সেই দিন

গুলোর কথা ভুলিয়ে দিয়েছে, কারন আমরা আগে চাইলে আমাদের প্রিয় জনের কোন খোজ খবর নিতে

পারতাম না।কিন্তু আজ আর সেই সব দিন গুলো নেই। মানুষ সেই দিন গুলোকে মনেও করে না খুব একটা

কারণ নিত্য নতুন প্রযুক্তি আমাদের সব কিছু কেই আপন করে দিয়েছে। আর এ কারনেই এই পর্বে সেই

সকল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের সুবিধা সর্ম্পকে আলোচনা করবো।

 দ্রুত যোগাযোগ :

সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের মাধ্যমে আমরা  তাৎক্ষনিক যোগাযোগ করতে পারি। এছাড়া ব্যবসায়ের দিক

দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া সাইট গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং মাধ্যমে

আপনি যেখানে চান, যখন চান যোগাযোগ করতে পারবেন। কোন রকম সমস্যা ছাড়াই ।

খরচ কম লাগে:

ঐতিহ্যবাহী বিপণন সরঞ্জাম যেমন সংবাদপত্র, পত্রিকা এবং বহিরঙ্গন বিলবোর্ডের তুলনায়, সোশ্যাল

মিডিয়া মার্কেটিং কম ব্যয়বহুল। সোশ্যাল মিডিয়া একটি ফ্রি মাধ্যম এবং পেমেন্ট চ্যানেল হিসেবে যুক্ত

হতে পারে। এখানে কম খরচে প্রচার প্রচারনা করা হয়ে থাকে।

সামাজিক দিক দিয়ে:

সোশ্যাল মিডিয়া হল ইন্টারনেট সচেতন জনগোষ্ঠীর মধ্যে বর্তমান প্রবণতা। সুতরাং, এটি উপেক্ষা করা

যাবে না। যদি কোন প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহকদের নিকটবর্তী হতে চায়, তাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে তাদের

প্রোফাইল থাকা উচিত। কারন ব্যবসায় অগ্রগতির জন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং খুবি গুরুত্বর্পূণ সাইট।

সোশ্যাল মিডিয়া মাকেটিং এর অসুবিধা সমুহ কি ?

আমরা যাকে ফেইসবুক নামে চিনি এটাই একটি এই সোশ্যাল মিডিয়া।এ রকম আরো অনেক সোশ্যাল

মিডিয়া রয়েছে যেমনঃ টুইটার,মাইস্পেস,গুগল প্লাস, ইন্সটাগ্রাম,ইউটিউব ইত্যাদি।

কিন্তু কোন কিছু যতোই জনপ্রিয় হোক না কেন,তার কিছু নেগেটিভ দিক তো থাকবেই! এবং

ব্যবহারকারীরা যদি সে সব দিক সম্পর্কে সতর্ক না থাকে,তাহলে জনপ্রিয় মাধ্যম গুলো জীবনকে হুমকির

মুখে ঠেলে দিতে পারে খুব সহজে ,এছাড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে নিজের সাজানো জীবন! তাই সব ক্ষেত্রে

সতর্ক থাকতে হবে।

এখন আমি সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের অসুবিধা সর্ম্পকে আলোচনা করবো।

নানা রকম অ্যাপস ব্যবহার:

সোশ্যাল সাইট মানেই হল অসংখ্য অ্যাপসের ছড়াছড়ি। আর এই অ্যাপস গুলোর বেশির ভাগ ই

অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকর! এক গবেষণায় দেখা গেছে,সোশ্যাল সাইট ব্যবহারকারীদের বিশাল একটা

সংখ্যা তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করেন,শুধু মাত্র অ্যাপস চেক করতে গিয়ে,এদের মধ্যে অধিকাংশ তার

পিসির কার্যক্ষমতা সম্পূর্ণ নষ্ট করে ফেলেন অ্যাপস এর দ্বারা এবং আরেক অংশের আইডি হ্যাক হয়ে

যায় শুধুমাত্র অতিরিক্ত নানান রকমের অ্যাপস ব্যাবহারে । সুতরাং সাবধান থাকবেন।

পরিবারের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করে:

বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে যে,যারা অনেক বেশি সোশ্যাল সাইট গুলোতে সময় দেন,ব্যক্তিগত জীবনে

তাদের সাথে পরিবারের বেশ দূরত্ব সৃষ্টি হয়! দেখা যায়,তারা দিন শেষে বাড়ি ফিরে অথবা সাপ্তাহিক

ছুটির দিন গুলোতেও পরিবার কে সময় না দিয়ে সময় দেয় সোশ্যাল মিডিয়া গুলোতে যার ফলে মানুসিক

থেকে শুরু করে বাহ্যিক পর্যন্ত সব দিক থেকে দূরত্ব সৃষ্টি হয় পরিবার এর সাথে।

ভিত্তিহীনভূয়া খবর পাওয়া যায়:

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি ভিত্তিহীন খবর প্রচার করা হয় সোশ্যাল সাইট গুলোতে,যা মিডিয়া সম্পর্কে

সমাজে খারাপ ধারণা সৃষ্টি করছে! বিশেষজ্ঞদের মতে,ভুয়া ও বানানো খবর প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে

সোশ্যাল মিডিয়াকে।সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে ধর্মীয় বিষয়ে মিথ্যা খবর ছড়িয়ে দেশে-বিদেশে

বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চালানো হয়। অনেক সময় সফলতাও হচ্ছে

তারা। গুজব তৈরির জন্য তারা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অর্থাৎ ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কডটান,গুগল প্লাস

ইত্যাদির সর্বোচ্চ ব্যবহার করছেন।

প্রশাসনিক বিপর্যয়েরও একটি মাধ্যম:

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ এ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে,সোশ্যাল সাইট গুলোতে প্রশ্ন ফাঁসের উৎসব

চলছে! সব ধরনের পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাচ্ছে এই মাধ্যম গুলোতে,ফলে বিপর্যয়ের মুখে

পড়েছে শিক্ষা ক্ষেত্র সহ সব রকমের প্রশাসনিক কার্যক্রম।

কর্মক্ষেত্রের জন্য সমস্যা তৈরি করে:

অতিরিক্ত সোশ্যাল সাইটের প্রতি আসক্তি এবং এর অপব্যবহার শুধু মাত্র পরিবার ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের

জন্যই যে ক্ষতিকর তা না, এটা সমস্যা তৈরি করতে পারে আপনার কর্মক্ষেত্রেও!

সংবাদের ক্ষেত্রে প্রভাব :

বর্তমানে সংবাদের জন্য সংবাদপত্র, বেতার ও টেলিভিশনের ওপর নির্ভরতা আগের তুলনায় অনেকগুণে

কমেছে। কারন এখন সোশ্যাল মিডিয়া, ই-মেইল অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংবাদ পেয়ে

থাকে।

কিশোরীদের ওপর প্রভাব :

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটা ক্ষতিকর দিক হল কিশোর-কিশোরীদের কাছে পর্নোসাইট উন্মুক্ত

হয়ে পড়া। সহজেই তারা বয়স্কদের সাইটে ঢুকতে পারে যা তাদের অপরিপক্ব মানসিকতায় ক্ষতিকর

প্রভাব ফেলতে পারে।  ফেসবুকের মায়ায় প্রায়ই আটকে পড়ছে তরুণ ও কিশোর সমাজ। লেখাপড়া,

কোচিং, প্রাইভেট, টিভি দেখা ইত্যাদি কারণে সময় বের করা এমনিতেই সম্ভব হয় না। তারপরও যেটুকু

পাওয়া যায় তাও কেড়ে নিচ্ছে ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। হাতে হাতে এখন আইফোন,

স্মার্টফোন। যখন তাদের ভবিষ্যতে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখার কথা তখন তারা ভাবছে ফেসবুকে কত

আকর্ষণীয় ছবি আপলোড করা যায়। অথবা এমন কী কথা লেখা যাবে যাতে লাইক, শেয়ারের বন্যা বয়ে

যাবে। এতে বুদ্ধির বন্ধ্যত্ব তৈরি হচ্ছে, বিঘ্নিত হচ্ছে মেধার বিকাশ।’

সামাজিক বৈষম্য তৈরি হচ্ছে :

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমাজে ধনী-দরিদ্রের মাঝে ব্যবধান তৈরি করে। হতদরিদ্র ও দরিদ্র

জনসাধারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবিধা গ্রহণ করতে অক্ষম। যাদের সামাজিক যোগাযোগ

মাধ্যম ব্যবহারের দক্ষতা আছে তারা চাকরি, প্রভাবশালীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা এবং নিজ এলাকায়

সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ বেশি পেয়ে থাকে।

আসক্তি তৈরি করা :

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে এক ধরনের আসক্তি তৈরি হয়। অধিক সময় ব্যয়

হয়, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং যৌন আলাপচারিতা বেশি হয়। এসব কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

ব্যবহারকারীদের বিকারগ্রস্ত করে তোলে।

চাকরি ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব :

কোনো তরুণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর ছবি পোস্ট করলে চাকরি ক্ষেত্রে তার নেতিবাচক

প্রভাব পড়তে পারে।

কলেজে ভর্তি :

ছাত্রছাত্রীদের ফেসবুক কমেন্ট, পোস্টিং কোনো কলেজের নীতিমালা বা মূল্যবোধের পরিপন্থী হলে ওই

কলেজে সে ভর্তির সুযোগ পাবে না। আগে ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর, রিপোর্ট কার্ড, পাঠ্যক্রমবহির্ভূত

কার্যক্রম ইত্যাদি বিবেচনা করা হতো ভর্তির সময়। এখন সময় বদলেছে, পশ্চিমা বিশ্বে শিক্ষা

প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র ভর্তির সময় ভর্তিচ্ছুদের ফেসবুক প্রোফাইল পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। আমাদের

দেশেও অদূর ভবিষ্যতে এরকম ভর্তি পদ্ধতি শুরু হবে আশা করা যায়।

জঙ্গি সংগঠনগুলো কর্তৃক ব্যবহার :

জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও নিজেদের সংগঠিত করার কাজে ব্যাপকভাবে সামাজিক

যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে থাকে। আইএস তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও তরুণদের

সংগঠনে রিক্রুট করার কাজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্য নিচ্ছে।

বাংলাদেশে গবেষণা :

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক বছর আগে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের ওপর গবেষণা করা হয়। এ গবেষণায়

দেখা গেছে, ফেসবুকের কারণে অনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পক্ষে মত দিয়েছেন সব শিক্ষক

এবং তিন-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী। ফেসবুকে নগ্ন ছবি/ভিডিও ছেড়ে দেয়া হয়, নারীদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য

করা হয় এবং স্পর্শকাতর বিষয়ে অপপ্রচার চালানো হয়।

দেখা গেছে, ফেসবুকের কারণে অনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পক্ষে মত দিয়েছেন সব শিক্ষক

এবং তিন-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী। ফেসবুকে নগ্ন ছবি/ভিডিও ছেড়ে দেয়া হয়, নারীদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য

করা হয় এবং স্পর্শকাতর বিষয়ে অপপ্রচার চালানো হয়।

সুপারিশ :

ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য গবেষণায়

কতগুলো সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- অনৈতিক কাজ বন্ধ করার জন্য অ্যাকাউন্ট সিকিউরিটি

বৃদ্ধি করা, অশালীন ছবি ও তথ্য সম্পর্কে একটা শালীন নীতিমালা প্রণয়ন করা, ব্যবহারকারীদের নীতি

ও নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করা এবং ফেসবুকের নেতিবাচক দিক বর্জন করার কথা বলা। নারীদের হেয়

প্রতিপন্ন করে এমন গ্রুপগুলো চিহ্নিত করে এ অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করার উদ্যোগের সুপারিশও করা

হয়েছে গবেষণায়। বিনোদন লাভের জন্য অনেক শিক্ষার্থী ফেসবুক ব্যবহার করে। বিনোদনের নামে কেউ

যেন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও গুরুত্বপূর্ণ

ভূমিকা রয়েছে। তাদের ছেলেমেয়েরা কী পরিমাণ সময় ব্যয় করছে ফেসবুকে,পর্নোসাইট ভিজিট করছে

কিনা, পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে কিনা সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

ভিজিটরদের জন্য পরামর্শ :
সময় নির্ধারণ:

নির্দিষ্ট একটা সময়ের পর ই-মেইল, সোশাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন, গেইমস এসবের

দিকে নজর না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, এই সিদ্ধান্তগুলোতে অটুট

থাকতে হবে।

পরিবার এর সদস্যদের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে:

আপনার সাথী কিংবা পরিবার এর কোনো সদস্য আশপাশে থাকলে মোবাইল ফোনে মুখ গুজে না থেকে

তাদের প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত। পাশাপাশি কথা বলতে হবে। না হলে বিষয়টি গুরুজন, সমবয়সি,

স্নেহভাজন, সঙ্গী সবার চোখেই বেয়াদবই, তাচ্ছিল্য কিংবা অসামাজিকতার প্রকাশ করে।

মোবাইল ফোন দূরে রাখা:

সঙ্গীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত কাটানোর মধ্যই ফোনের দিকে মনোযোগী হওয়ার বিষয়টা সংসার ভাঙার

কারণও হয়ে যেতে পারে। তাই নিজেদের মধ্যে সময় কাটানোর সময় ফোন আশেপাশে রাখা উচিত না।

ইন্টারনেটের সংযোগ বন্ধ রাখা:

পরিবার, বন্ধুমহলে সময় কাটানোর সময় ফোনে এর ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা যেতে পারে। যার ফলে

ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আপনার মনোযোগ নষ্ট করতে পারবে না।

Leave a Comment