পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর মধ্যে একটি হলো ‘যোগাযোগ’। এদেশের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায়
যোগাযোগ দক্ষতা অর্জনকে ততটা জোর দেয়া হয় না। আপনি কর্মজীবী হোন বা শিক্ষার্থী অন্যদের চেয়ে
প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে যোগাযোগে দক্ষতা অর্জন আপনার জন্য জরুরী।
চলুন তাহলে সে বিষয় সর্ম্পকে ভালো ভাবে যোগাযোগের দক্ষতা অর্জনের উপায়গুলো জেনে নেওয়া
যাক:
১. মনোযোগ দিয়ে কথা শুনুন:
কাউকে ভালোভাবে বুঝতে হলে তার প্রতিটা কথা মন দিয়ে শুনতে হবে, হৃদয় দিয়ে শুনতে হবে। সফল ও
জনপ্রিয় ব্যক্তিরা মনোযোগ দিয়ে কথা শোনার দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। কারো কথা মনোযোগ দিয়ে
শোনা মানে হলো- তাকে দাম দেয়া, মর্যাদা দেয়া, সম্মান দেখানো। ঠিক তেমনই অন্যের কথা না শোনা
মানে তাকে গুরুত্ব না দেয়া, মর্যাদা ও সম্মান না দেখানো। এতে করে সেই মানুষটি কখনোই আপনার
সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখবে না। তাই যখনই আপনি কারো সাথে কথা বলবেন তার কথা আগে
মনোযোগ দিয়ে শুনুন সে কী বলতে চাইছে তার মনোভাব বোঝার চেষ্টা করুন। বক্তার কথা শেষ হয়ে
গেলে তবেই প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করুন। এতে করে খুব সহজেই আপনি তার মন জয় করে নিতে পারবেন।
২. হাসি মুখে কথা বলুন:
একটি চমৎকার স্মিত হাসি হাজার কথার চেয়েও মধুর। তাই কথা বলার সময় একটা অকৃত্রিম হাসি
চোখে মুখে ফুটিয়ে তুলুন। মানুষ অনুকরণ প্রিয়। তাই আপনার হাসি মুখ সামনের মানুষটির মুখেও হাসি
ফুটিয়ে তুলবে যা আলাপ আলোচনা করে তুলবে আরো প্রাণবন্ত।
৩. বাজে প্রশ্ন করবেন না:
আমরা প্রায় ভুলে যাই আপত্তিকর বা বিব্রতকর প্রশ্ন কোনটা! যেমন তরুণ বা তরুণী হলে হরহামেশাই
জিজ্ঞাসা করে বসি, আপনার বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ড আছে, সেলারি বা বয়স কত? প্রথম পরিচয়ে কেউ এমন
প্রশ্ন করলে প্রায় প্রত্যেকেই বিব্রত হয়। আর যদি কেউ পরিস্থিতি সামলে হাসি মুখে এমন বিব্রতকর
প্রশ্নের উত্তর দেয়, তবে জেনে রাখুন সেই উত্তর মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশ।এছাড়া একান্ত
ব্যাক্তিগত প্রসঙ্গগুলোও প্রথম পরিচয়ে এড়িয়ে চলা উত্তম। সুতরাং প্রথম পরিচয়ে কখনো আপত্তিকর বা
বিব্রতকর কোনো প্রশ্ন নয়, বরং এমন প্রশ্ন করুন যাতে তিনি আলাপ এগিয়ে নিতে উৎসাহ পান।
৪. আত্নবিশ্বাস নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করুন:
আপনি যদি আপনার নিজের বক্তব্যের ব্যাপারে অনিশ্চিত থাকেন, অপর জন সেখানে নিশ্চয়তা খুঁজে
পাবে না। তাই নিজের আত্নবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলুন। যেখানে জোরে কথা বলার দরকার সেখানে জোরে কথা
বলুন, যেখানে আস্তে কথা বলার দরকার সেখানে আস্তে কথা বলুন। স্পষ্টভাবে কথা বলুন যেন যে
শুনছে সে যেন বুঝতে পারে আপনি যা বলছেন তাই সঠিক। অপরজনও তাতে প্রভাবিত হবে, ভরসা খুঁজে
পাবে। তাই নিজের উপর ভরসা রেখে আত্নবিশ্বাসের সহিত কথা বলুন।
৫. নব্বই সেকেন্ড সময় লাগে মানুষ চিন্তে:
আমরা যখন কোন ম্যাগাজিন দেখি তখন আমাদের মস্তিষ্ক ২ সেকেন্ডেই ঠিক করে ফেলে ম্যাগাজিনটি
পড়বো কী পড়বো না। ম্যাগাজিনের কভার আকর্ষণীয় হলেই আমরা সেটা খুলে দেখি। ঠিক তেমনি কোন
ব্যক্তি আপনাকে কেমন ভাবে গ্রহণ করবে তা প্রথম দর্শনের নব্বই সেকেন্ডের মধ্যেই ঠিক করে ফেলে
অর্থাৎ তিনি আপনাকে পছন্দ করবে কিনা বা কতটা পছন্দ করবে তা নির্ধারিত হয় মাত্র নব্বই
সেকেন্ডে। সুতরাং প্রথম নব্বই সেকেন্ড নব্বই বছরের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। নিজের অঙ্গভঙ্গি, অভিব্যক্তি
ও কন্ঠস্বরের যথার্থ ব্যবহার করুন এই নব্বই সেকেন্ডে। আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গীতে কথা বলুন চোখে চোখ
রেখে আর হরণ করুন সদ্য পরিচিত হওয়া মানুষটার হৃদয়। তাহলে আপনি সেই মানুষটা কে ভালো
ভাবে জানতে পারবেন।
৬. সামনা সামনি যোগাযোগ:
সবচেয়ে ভালো যোগাযোগ মাধ্যম হলো বডি ল্যাংগুয়েজ। আপনি একজনের সাথে কথা বলছেন ,আর সে
অন্যদিকে তাকিয়ে আছে বা মোবাইল টিপছে। এমন মানুষকে কখনো ভালো লাগবে? অবশ্যই না। সারা
পৃথিবীতে রেডিও-এর চেয়ে টিভি অনেক বেশি জনপ্রিয় কিংবা অনেক বেশি ভালো যোগাযোগের মাধ্যম।
কারণ টিভিতে আপনি বডি ল্যাংগুয়েজ বুঝতে পারছেন। আপনি শতকরা ৬০ ভাগ ইফেক্টিভ
কমিউনিকেশন করতে পারেন সামনা-সামনি, নয়তো ভিডিও কমিউনিকেশনে। মানুষের শরীরের
অঙ্গভঙ্গি অনেক কিছু বলে দেয় যা টেক্সট বা অডিও সেটাকে ধারণ করতে পারে না।
আরো জানুন:
মুখোমুখি যোগাযোগ ব্যবস্থায় আপনার গলার স্বর, শরীরের ভাষা সবকিছু চোখ/কান ক্যাপচার করে
আপনার ব্রেইনকে দিতে পারে; আপনার ব্রেইন সেগুলো প্রসেস করে আপনাকে যা বোঝায়, আপনি তাই
বোঝেন । সুতরাং যার সাথে কথা বলছেন তার চোখের দিকে তাকাবেন যেন সে বুঝতে পারে আপনি
তার কথা মন দিয়ে শুনছেন, ফোকাস করেছেন।
৭. সহানুভূতি প্রদর্শন করে কথা বলুন:
আপনার অপর পাশের মানুষের সাথে আপনার কথা বলার মতের অমিল থাকতেই পারে। সকলের সাথেই
আপনি একমত হবে এমন কিন্তু না। সেটা আপনার অধীনে কাজ করা লোকটির ক্ষেত্রেও হতে পারে
আবার আপনার বন্ধুর হ্মেত্রেও হতে পারে। কী করবেন তখন? আপনি চুপ থাকেন বলে তাকে থামিয়ে
দিবেন? অবশ্যই না। তাদের বোঝার চেষ্টা করুন, সম্মান দেখান। দ্বিমত জানাতে শুরুটা এভাবে
করুন– ‘আপনার ব্যপারটা বুঝতে পেরেছি।
আরো জানুন:
আপনার জায়গায় থাকলে হয়তো আমিও এভাবেই ভাবতাম বা বলতাম। কিন্তু….’। তাদের জানার
সীমাবদ্ধতা বা অন্য কোনো কারণে হতে পারে এটা কিন্তু দোষের নয়। আপনি ব্যপারটা বোঝার চেষ্টা
করে তাকে সম্মান দিয়ে আপনার মতামত প্রকাশ করুন। তবে খেয়াল রাখবেন সে যাতে অপমানিত বা
পরাজিত অনুভব না করে। তাহলে পরিবেশ টা ভালো থাকবে এবং অপর ব্যক্তি খুশি হবে।
৮. বন্ধুত্বপূর্ন আচরণ করার চেষ্টা করুন:
বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করা মানুষদের আমরা সবাই খুব পছন্দ করি। একটা বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি, বন্ধুত্বপূর্ণ টোন
বা ভাব অপরজনকে আপনার সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আপনাকে সৎ করে তুলবে। তারা খোলামেলা
ভাবে কথা বলায় উৎসাহ পাবে। একজন সহানুভূতি–সম্পন্ন ও মার্জিত ব্যক্তিকে সকলেই পছন্দ করে।
তার সাথে কথা বলা, নিজের ব্যক্তিগত সুখ দুঃখের কথা শেয়ার করা সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। আপনার
সামনে অন্যকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে দিন, যোগাযোগ অনেক সহজ হয়ে যাবে।
৯. অপর ব্যক্তির কথায় সাড়া দিন:
আপনি যার সাথে কথা বলছেন তার কথায় সাড়া দিন। সাড়া দিতে পারা, সঠিকভাবে ফিডব্যাক দেয়া
কমিউনিকেশন স্কিলের একটি গুরুত্বপূর্ন জায়গা। ফিডব্যাকেরক্ষেত্রে গঠনমূলকথাকা জরুরী। কেউ
আপনার সাথে কথা বলেই যাচ্ছে আর আপনি চুপ করে আছেন তাহলে সেই মানুষটি আপনার সাথে কথা
বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। সামনাসামনি, ফোন বা ইমেইলে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন, যোগাযোগের
জবাব দিন। আলোচনায় যেখানে প্রয়োজন সেখানে সাড়া দিন, প্রয়োজনে প্রশ্ন করুন, একমত জানান,
প্রশংসা করুন।
আরো জানুন:
সুতরাং আপনার জীবনের সফলতা বা ব্যর্থতা অনেকটাই নির্ভর করে আপনার যোগাযোগের দক্ষতার
উপর। কমিউনিকেশন স্কিল একদিনেই ইমপ্রুভ করা বা পাল্টে ফেলা যায় না। এটি একটি দীর্ঘতর
প্রক্রিয়া। দীর্ঘদিনের অভ্যাসই পারে আপনার কমিউনিকেশন দক্ষতা বাড়াতে। তাই চেষ্টা করুন আর
এগিয়ে চলুন।
আজ এ পযর্ন্ত, ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাবেন।
ভালো থাকবেন।।