মানুষের সবচেয়ে বাজে অভ্যাস হচ্ছে বড় কাজ পাশ কাটিয়ে সহজ কাজ দিয়ে দিনের শুরুটা করা। এতে
করে পরবর্তী সময় আর সেই কাজটা করাই হয়ে উঠে না। হাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলেও এখন না
৫ মিনিট পরে, তারপর আরো ৫ মিনিট পরে করতে করতে সময় পার করে দেই। কাজের কাজ কিছুই হয়
না। এরকম অবস্থা চলতে থাকলে কি কাজ শেষ করা সম্ভব হবে? কখনোই না!
তাই নিজেকে বদলাতে হলে নিজের কিছু বদ অভ্যাস বদলে ফেলতে হবে । তাহলে আমি মনে করি আপনি
বা আমি সবাই ভালো থাকতে পারবো।

কঠিন কাজটি দিনের শুরুতেই সেরে ফেলার অভ্যাস করুন:
দিনের শুরুতেই কঠিন কাজটি সেরে ফেলতে পারলে আপনি থাকবেন টেনশনমুক্ত এবং পরের কাজগুলো
করা সহজ হবে। সহজ কাজগুলো আগে করে ফেললে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। পরি কঠিন কাজ করা
আরো কঠিন হয়ে উঠবে। তখন কাজে মন বসবে না। তাই দিনের শুরুতেই কঠিন কাজটি আগে সেরে
ফেলার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে শিখুন:
সময়ের সঠিক ব্যবহারে প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করতে হবে। কারণ মানুষের চেয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার বেশি
সহজ।কোথায় কতোটুকু সময় ব্যয় হচ্ছে সেটা খেয়াল করুন এবং সেই অনুযায়ী কাজের তালিকা তৈরি
করে রাখুন। এতে করে আপনার সময় আর অযথা ব্যয় হবে না।

‘না’ বলতে শিখা অভ্যাস করুন:
‘না’ বলতে পারাটা অনেক বড় একটা গুণ। অনেক সময়ই আমরা ‘না’ বলতে পারি না বলে, অনুরোধের
ঢেঁকি গিলে নিজেরাই ফেঁসে যাই। আমরা মনে করি অপর পাশের মানুষটিকে ‘না’ বললে সে না জানি কি
মনে করবে। ধরুন, আগামীকাল আপনার একটা মিড আছে বা একটা অ্যাসাইনমেন্টের ডেডলাইন আছে
কিন্তু এরমধ্যেই আপনার বন্ধু ফোন দিয়ে বললো দোস্ত, চল একটু ঘুরে আসি!- এমন সময় কী করবেন?
সব বাদ দিয়ে বন্ধুর সাথে যাবেন নাকি আপনার কাজগুলো করবেন? অবশ্যই আপনার কাজগুলো আগে
শেষ করবেন। অনেক সময় আমরা ভেবে নিই বন্ধু কি মনে করবে না গেলে, সেক্ষেত্রে ভালোভাবে বন্ধুকে
বুঝিয়ে বলুন। জীবনে ‘না’ বলতে শেখাটা অনেক বেশি জরুরী, সবাইকে খুশি করে চলতে আপনি
পারবেন না। সবাইকে খুশি করে চলতে গেলে আপনার ব্যক্তিগত জীবনে ক্ষতি হবেই। তাই কারো
অনুরোধ রাখতে না পারলে সরাসরি সুন্দর করে ‘না’ বলে দিন।

পরবর্তী দিনের কর্মতালিকা তৈরি করে রাখতে পারেন:
আমরা যখন পরীক্ষার হলে প্রশ্ন উত্তর লিখি তখন কি করি, প্রশ্নের সবচেয়ে ভালো যেই উত্তরটি পারি
সেটাই আগে লিখি ঠিক একইভাবে দিনের অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ তালিকার শুরুতে রাখুন। একজন সফল
মানুষ সবসময় পরবর্তী দিনের কর্মতালিকা প্রস্তুত রাখেন। এই তালিকা তিনি দিনভর যুক্ত হওয়া নতুন
নতুন কাজ নোট করে বা দিনের কাজ শেষ করার আগ মুহুর্তে তৈরি করে নেন। তারপর রাতে ঘুমানোর
আগ পর্যন্ত যদি আরো কিছু মনে পড়ে তবে সেটাও তালিকায় যুক্ত করে নেন। এভাবে আলাদা করে সময়
না ব্যয় করেও পরবর্তী দিনের চমৎকার কর্মতালিকা প্রস্তুত হয়ে যায়। শুধু পরবর্তী দিনের কর্মতালিকা
প্রস্তুত করলেই হবে না। সেসব কাজগুলোর থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ বিবেচনা করে
নির্ধারণ করতে হবে কোনটা আগে করবেন আর কোনটা পরে। একটা করে কাজ শেষ হলে তা শিট থেকে
কেটে দিতে হবে, এতে করে আপনি মানসিক প্রশান্তি লাভ করবেন।
কাজের তালিকা লেখার অভ্যাস করুন:
আপনি যদি না জানেন কোন কাজের পর কোন কাজ আপনাকে করতে হবে, তাহলে কিন্তু মহা মুশকিল!
আমরা বাঙালিরা কিছু পারি আর না পারি, ভুলে যেতে বেশ ওস্তাদ। এই ভুলে যাওয়ার রোগ থেকে মুক্তি
পেতে প্রতিদিন কী কী কাজ করবেন, তা একটি ডায়েরিতে লিখে রাখার অভ্যাস করুন। ডায়েরি না
থাকলে হাতে তো স্মার্টফোন আছেই! প্লে-লিস্ট থেকে To-Do-List অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিন, মনে
রাখা অনেকটাই সহজ হবে। প্রতিদিন সকালে অফিসে বা ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় যাত্রাপথে সেই তালিকা
দেখে কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী লিস্ট করে নিতে পারেন। এভাবে গুছিয়ে চললে একসাথে অনেকগুলো কাজ
থাকলেও সময়মতো তা শেষ করা সম্ভব হয়ে যাবে বলে আশা রাখি।