নিজের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বদলাতে হবে ১০টি অভ্যাস।

আপনি কী আগের মত কাজে মনোযোগ দিতে পারছেন না? আপনার কর্মক্ষমতা কী দিন দিন কমে

যাচ্ছে?  আমরা অনেকেই জানি না যে, কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার পিছনে আমাদের নিজেদেরই কিছু বাজে

অভ্যাস দায়ী থাকে। সুতরাং কর্মক্ষমতা বাড়াতে চাইলে কিছু অভ্যাসসমূহকে চিরদিনের জন্য বিদায়

জানাতে হবে।

 তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক নিজের কর্মক্ষমতা বাড়াতে চাইলে যে ১০টি অভ্যাস বদলানো উচিত:

১.অতিরিক্ত কাজ করা থেকে বিরত থাকুন:

আপনার সামর্থ্যের চেয়ে অধিক কাজ করবেন না। অনেকেই আছেন যারা কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে

পরলেও বিরতি নিতে চান না। একটি গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, একদিনে অত্যাধিক কাজ করলে

শুধুমাত্র আপনার কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় না বরং আপনার পরের দিনের কাজের গতিকেও রোধ করে।

যখন কাজের চাপে অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়বেন তখন সকল প্রকার কাজ থেকে কিছুক্ষনের জন্য নিজেকে

বিরত রাখুন।

২.ঘুমানোর সময় ইলেকট্রিক ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন:

অনেকেই বুঝতে পারেন না, এই বাজে অভ্যাসটি তাদের কর্মক্ষমতা আর উৎপাদনশীলতার উপর কতটা

ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। অনেকেই ঘুমানোর সময় ট্যাব, ল্যাপটপ বিশেষ করে মোবাইল ফোন বিছানায়

নিয়ে ঘুমাতে যান। এসব থেকে যে নীল রঙের আলো নির্গত হয় তা মস্তিষ্ককে জাগিয়ে রাখে বলে ঘুম নষ্ট

হয়। রাতের অন্ধকারে স্ক্রিনের আলো আমাদের চোখের রেটিনার জন্য ক্ষতিকর। সম্প্রতি এক সমীক্ষায়

দেখা যায়, অধিক রাত পর্যন্ত ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহারের ফলে পরবর্তী দিনের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।

 ৩.অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস বনধ করুন:

যদি মনে করেন, চিনি এনার্জি বাড়ায় তাহলে আপনি ভুল জানেন। চিনি ঠিক তার উল্টোটা করে।

গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, অতিরিক্ত চিনি খেলে কমে যায় কর্মক্ষমতা। এছাড়াও হতাশা, ভুলে

যাওয়া, মস্তিষ্ক কম কাজ করা ইত্যাদি সবকিছু অতিরিক্ত চিনি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার সাথে

জড়িত।

৪.কাজের সময় ইমেল চেক করা:

অনেকেই কাজের সময় ই-মেইল চেক করে থাকেন যা কাজের মধ্যে মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটায়।

আপনার আসা ই-মেইলগুলোর জবাব দিতে কতটুকু সময় ব্যয় করবেন তা আগেই ঠিক করে নিন।

একদিনে আপনি অনেক ই-মেইল পেতে পারেন কিন্তু এর মধ্যে সবগুলো সমান গুরুত্বপূর্ণ হবে না নিশ্চয়ই।

গুরুত্বের উপর ভিত্তি করে ই-মেইলগুলোর জবাব দিন। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সময় এতে ব্যয়

করবেন না কখনোই।

৫.ঘুমের সময় ঠিক না রাখার ফলে:

এই ব্যস্ত জীবনে কম বেশি সবারই রাতে দেরি করে ঘুমাতে যাওয়া হয়। কর্মক্ষমতা বাড়াতে চাইলে প্রথমে

এই অভ্যাসটি দূর করতে হবে। কারণ রাতে দেরিতে ঘুমাতে গেলে ঘুম পুরো হয় না, যার ফলে পরের দিন

কাজের উপর ফোকাস দেয়া যায় না। আবার একেকদিন একেক সময় ঘুমোতে গেলে ঘুমের পরিমাণ ও

সময় উল্টাপাল্টা হয়ে একটি বদ অভ্যাসের সৃষ্টি হয়। তাই চেষ্টা করুন, রাতে একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক

করে ঘুমাতে যাবার।

৬.অতিরিক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার করবেন না:

অতিরিক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করলে মানুষের কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। প্রযুক্তি যেমন মানুষের জন্য নানা

উপহার নিয়ে এসেছে তবে সেইসাথে এই প্রযুক্তিগুলো কেড়ে নিচ্ছে মানুষের মনোযোগ। গুরুত্বপূর্ণ কাজের

মধ্যে কোনো মেইল বা নোটিফিকেশন কাজের মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে। আপনি যদি আপনার কাজ রেখে

বার বার আপনার মোবাইল বা মেইল চেক করেন, তাহলে নতুন করে আপনার কাজের প্রতি

মনোসংযোগ ফিরিয়ে যথেষ্ট সময় লাগবে। কাজের সময় এভাবে বার বার মনোসংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে

অবশ্যই আপনার কর্মদক্ষতার উপর খারাপ প্রভাব পড়বে।

৭.মাল্টিটাস্কিং থেকে বিরত থাকুন:

 গবেষকরা মনে করেন, একসঙ্গে একাধিক কাজ করলে মস্তিষ্কের পক্ষে কোনো কাজই ঠিকমতো করা সম্ভব

হয় না এবং মস্তিষ্ক কোনো কাজেই মনোসংযোগ করতে পারে না। আমাদের মস্তিষ্ক যখন একসাথে

একাধিক কাজে মনোযোগ দিতে থাকে, তখন মস্তিষ্কে চাপের সৃষ্টি হয় যার ফলে কাজের মান খারাপ হয়

এবং ভুল করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

৮.সব সময় নেতিবাচক চিন্তা করা

 আপনার চিন্তা-ভাবনা ইতিবাচক হতে হবে। সারাক্ষণ নেতিবাচক চিন্তা করতে থাকলে আপনি

মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বেন যা আপনার কর্মক্ষমতাকে কমিয়ে দিবে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, জীবনের

সবকিছুই সহজ ও সুন্দর করে তোলে। যখন আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রে, পড়াশোনা বা অন্য কোনো

ব্যাপারে কর্মদক্ষতার কমতি অনুভব করবেন তখন ইতিবাচকভাবে সবকিছু চিন্তা করার চেষ্টা করুন।

দেখবেন, ধীরে ধীরে আপনার কর্মক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।

৯.কম পানি পান করা

 আপনার শারীরিক কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে পর্যাপ্ত পানি পান না করলে । এমনকি আপনার শরীর

থেকে যদি মাত্র দুই শতাংশ পানি কমে যায় তাহলে আপনার কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে শুরু করে। একারণে

আপনি অল্পতেই ক্লান্ত বোধ করবেন। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং সকল কাজকর্মে

আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, কোন কাজই করতে ইচ্ছা করে না।

১০.ধূমপানের কারণে কর্মকক্ষমতা হ্রাস পায়ে থাকে:

 ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আমরা অনেকেই ধূমপান করে থাকি। ধূমপান মানুষের

কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এছাড়া ফুসফুসের ক্যান্সার, হার্টের রক্তনালী সরু হয়ে হার্ট এ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি,

মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বাধা, যৌন ক্ষমতা হ্রাসসহ নানা ক্ষতিকর দিক রয়েছে। শুধু ধূমপান নয়, সব

ধরণের নেশাজাতীয় দ্রব্য আমাদের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই, কর্মক্ষমতা বাড়াতে চাইলে উপরোক্ত

অভ্যাসগুলো বদলানোর চেষ্টা করুন ।

আরো জানুন: যে ১০টি কাজ করলে নিজের সম্মান বেড়ে যাবে

আরো জানুন: থেমে থাকা জীবন থেকে মুক্তির উপায়

Leave a Comment