নিজেকে বদলাতে প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন।

আপনি যদি আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই আপনার মোবাইলের নোটিফিকেশন চেক করে থাকেন, তাহলে

এই ব্লগটি আপনার জন্য। প্রযুক্তিতে আসক্ত হওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমরা কেউই স্বীকার করতে চাই

না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আপনি প্রযুক্তিতে আসক্ত। আমাদের সবার জীবনই কম বেশি প্রযুক্তি নির্ভর।

প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের জীবনকে অনেক বেশি সহজ করে দিয়েছে এটা সত্যি। কিন্তু কোনো কিছুই

অতিরিক্ত ভালো নয়, সেটা যত ভালো জিনিসই হোক না কেন।

প্রযুক্তি নির্ভরশীলতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, আমাদের সামাজিক জীবনের জন্যও তেমন

খুব একটা উপকারী নয়। ফেসবুক ব্যবহারের কারনে আপনার স্কুলের বন্ধুটির খোঁজ খবর আপনি

আজও রাখতে পারছেন, কিন্তু আপনার পাশের বাসার প্রতিবেশীর সম্পর্কে হয়তো আপনি কিছুই জানেন

না।  

আমরা সবাই চাই নিজের জীবনের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণটুকু ধরে রাখতে। আপনার জীবনে প্রযুক্তির

অতিরিক্ত প্রভাবটুকু কমাতে যে কাজগুলো করতে পারেন সেগুলোই এই ব্লগে তুলে ধরবো।

 স্বাস্থ্যকর নিয়ম গড়ে তুলবে হবে:

 যে কোনো অভ্যাস পরিবর্তনের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে একটি উপযুক্ত নিয়ম বা রুটিন গড়ে

তোলা। মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার শুরু করার আগে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাইরে

হাঁটতে যাওয়া বা যেকোনো স্বাস্থ্যকর কাজ করাকে আপনার দৈনন্দিন নিয়মে পরিণত করুন। ঘুম থেকে

ওঠার পর প্রকৃতির সাথে কিছু সময় কাটানো আপনার শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অনেক

উপকারী। ডিজিটাল স্ক্রিনের নীল আলোর পরিবর্তে সূর্যের আলোর সাথে দিন শুরু করলে সারাদিন

আপনি অনেক বেশি প্রাণবন্ত অনুভব করবেন এবং ভালো থাকার পেছনে নিয়মিত ব্যায়ামের ভূমিকা

তো আমরা সবাই জানি। তাই দিনের শুরুটা প্রযুক্তির হাতে ছেড়ে না দেওয়াই ভালো।

 নিজেকে সবসময় প্রযুক্তি র্নিভর করবেন না।

 মোবাইল, কম্পিউটার, টিভি বা আর যেই প্রযুক্তিই আপনি বেশি ব্যবহার করেন না কেন, সেগুলো

ব্যবহার করা যেন খুব সহজ না হয়। আপনার ড্রয়িং রুমের আসবাবপত্র এমনভাবে সাজিয়ে রাখুন যাতে

আপনি সোফায় বসে খুব সহজে টিভি দেখতে না পারেন। তার পরিবর্তে ঘরের বড় জানালার দিকটা

সামনে রেখে বসার ব্যবস্থা করুন। কম্পিউটার ব্যবহার করার পর তা পুরোপুরি আনপ্লাগ করে ফেলুন

যাতে পরের বার আপনাকে পুরো কাজটা আবার করতে হয়। ল্যাপটপ বা ট্যাবলেট সবসময় হাতের কাছে

না রেখে আলমারি বা ড্রয়ারে তুলে রাখুন। মোবাইল বিছানায় নিয়ে না ঘুমানোই ভালো। অ্যালার্মের জন্য

ঘড়ি ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।

নিদিষ্ট উদ্দেশ্য তৈরি করতে শিখুন:

 সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের একটি রুটিন তৈরি করুন। প্রতিদিন শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করুন এবং সেই সময়কে একটি উদ্দেশ্য দিন। আপনি যে বিষয়গুলো জানতে

চান, যা যা দেখতে চান সেগুলো নোট করে রাখুন। উদ্দেশ্যহীনভাবে ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রাম স্ক্রল করা

শুধুমাত্র সময়ের অপচয়। 

 অন্য মাধ্যম বেছে নিন

 এমন একটি শখ বেছে নিন যার সাথে প্রযুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। হতে পারে ছবি আঁকা বা রান্না করা

– অথবা যা আপনার ভালো লাগে। পিডিএফ-এর বদলে সত্যিকার বই পড়ার অভ্যাস করুন। গান

শোনার জন্য মোবাইলের পরিবর্তে অন্য কোনো মিউজিক প্লেয়ার ব্যবহার করতে পারেন। বিভিন্ন রকম

অ্যাপ ব্যবহার না করে নোট করার জন্য কাগজ-কলম ব্যবহার করুন। হয়তো আপনি কোনো

প্রোডাক্টিভ কাজের জন্যই প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। তারপরও ডিজিটাল স্ক্রিনের সামনে অতিরিক্ত

সময় কাটানো আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

 প্রতিদিন আপনার পছন্দের কোনো বই থেকে কিছু অংশ পড়ার গোল তৈরি করুন। শীগ্রই দেখবেন

প্রযুক্তির বাইরেও এমন কিছু আপনি পেয়ে গেছেন যার মাধ্যমে আপনি সুন্দর সময় কাটাতে পারছেন।

এবং কাজের সময় এই অভ্যাসটা আপনাকে অমনোযোগীও করছে না!

 নিজেকে সময় দিতে শিখুন:

 আমরা সবাই সামাজিক প্রাণী এটা তো সত্যি। কিন্তু কখনো কখনো আমাদের কিছুটা সময় একাও

কাটানো উচিত। নিজের যত্ন নেওয়ার জন্য কিছু সময় ব্যয় করা উচিত। প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য

সামাজিক জগত থেকে নিজেকে দূরে রেখে নিজের যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করুন। সেই যত্নটা হতে পারে

মেডিটেশন, কোনো শখের কাজ করা, বাইরে হাঁটতে যাওয়া, নিজের ত্বকের যত্ন নেওয়া অথবা যেকোনো

কিছু। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে আপনি যতই ভালোবাসেন না কেন, দেখবেন কিছু দিনের মাঝে এই

সময়টা আপনার দিনের সেরা সময়ে পরিণত হবে।  

 নিজেকে ‘প্রজেক্ট’ দিন

আপনি অনেক দিন ধরেই ভাবছেন আপনার আলমারিটা গোছাতে হবে। অথবা হয়তো কোনো একটা বই

পড়তে চেয়েও এখনও পড়া হচ্ছে না। সময়ের অভাবে যে কাজগুলো করা হয়ে উঠছিলো না, এখনই

সুযোগ সেগুলো করে ফেলার। আপনার সেই হয়ে না ওঠা কাজগুলোর একটি তালিকা বানিয়ে ফেলুন এবং

প্রতিদিন টিভি দেখে যে সময়টা কাটাতেন সে সময়ে একটু একটু করে সেগুলো করতে থাকুন।

প্রযুক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করুন

 অনেক অ্যাপ এবং ব্রাউজার অ্যাড অন আছে যা আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ওয়েবসাইট ব্লক

করতে সাহায্য করবে। কাজ করার সময় এধরনের অ্যাপ ব্যবহার করে আপনি নিজের প্রোডাক্টিভিটি

অনেকটাই বাড়াতে পারেন।  এই অ্যাপগুলো আপনার প্রতিদিন ইন্টারনেটে কাটানো সময়ও হিসাব করতে

পারে এবং আপনার বেছে নেওয়া লিমিট পাড় হয়ে গেলে আপনাকে তা জানিয়েও দেয়। এ ধরনের অ্যাপ

ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অথবা গেমিং এর সময় কমিয়ে আনতে

পারেন।

 একদিনে কোনো অভ্যাসই বদলানো সম্ভব না। তাই ছোট ছোট পদক্ষেপ নিন এবং আপনার জন্য কোন

পদ্ধতিটি কাজে লাগবে তা খুঁজে বের করুন। লেখা গুলো পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদেরকে

শেয়ার করতে ভুলবেন না।

আজ এ পযর্ন্ত ভাল থাকবেন ।  

Leave a Comment