কোন কাজের তারিখ আসলেই আমাদের মনে পড়ে, “ইশ! ওই কাজটি যদি আগেই শেষ করতে পারতাম
তাহলে কতো ভালো হতো”। কিংবা দ্রুত কাজ শেষ না করায় তুমুল প্রতিযোগীতার এই যুগে অন্যজন
তরতর করে অনেক উপরে উঠে গেল আর আপনি এখনও কোনো ম্যাজিক এর অপেক্ষায় আছেন কিভাবে
আপনিও দ্রুত যে কোনো কাজ শেষ করতে পারবেন!
হ্যা বন্ধুরা আজ আমি সে সব বিষয়ে বলবো আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক:
1. পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজের জন্য নোট তৈরী করুন:
দ্রুত কাজ শেষ করার চমৎকার একটি কৌশল হলো কাজ শুরুর আগে কিভাবে কাজটি করবেন সেটি
পরিকল্পনানুযায়ী নোট করে রাখা। যেকোনো কাজ শুরু করার পূর্বে সঠিকভাবে আগে থেকেই পরিকল্পনা
করুন কিভাবে আপনি কাজটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন। এরপর কাজটির কর্মপদ্ধতি সে
পরিকল্পনানুযায়ী নোট করুন। সম্ভব হলে আগের দিনই সে কাজটি নোট করে রাখুন যাতে আপনি পরদিন
খুব দ্রুত সেই কাজটি শুরু করার জন্য মনোনিবেশ করতে পারেন।
2. উজ্জ্বল কক্ষে কাজ করার চেষ্টা করুন:
আমরা অনেকেই অন্ধকার ঘরে কাজ করা পছন্দ করি। এই ব্যাপারটা অনেকের কাছে ‘কুল’ মনে হলেও
গবেষকদের মতে এটি একটি ভুল। কেননা অন্ধকার ঘরে কিংবা অনুজ্জল আলোয় কাজ করলে আমাদের
চোখের উপর অনেক বেশি চাপ পড়ে যেটি আমাদের মূল কাজে বিঘ্ন ঘটার একটি উৎস। ফলে
মনোযোগের অভাবে কাজটিও সঠিকভাবে দ্রুত শেষ করা হয়ে উঠে না। প্রাকৃতিক স্নিগ্ধ আলোয়
আমাদের মনোযোগ অনেক বেশি থাকে। তাছাড়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি উৎসাহীও করে তোলে
কাজ করার জন্য। তাই কাজ করার সময় অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল আলোর কক্ষে কাজ করাই উত্তম।
3. কাজের ছন্দ আনুন আয়ত্তে প্রথম ১৫ মিনিট :
কোনো কাজ শুরু হলে সেটি দ্রুত শেষ করার জন্য একটি ছন্দের প্রয়োজন। আপনি যদি কোন কাজ শুরু
করেন, তবে চেষ্টা করুন প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যেই সেই ছন্দটি রপ্ত করতে। এটিই আপনাকে পরবর্তী
পুরো সময় জুড়ে কাজ করার জন্য শক্তি জোগাবে। আপনার কাজের যেন ছন্দপতন না হয় এইজন্য প্রথম
১৫ মিনিট কোনো ধরনের প্রশ্ন করবেন না। কারণ কাজের প্রশ্ন উঠলে আপনার সেই কাজের একটা
ছন্দপতন ঘটবে। তাই চেষ্টা করুন প্রথমেই কাজের সেই ছন্দটি আয়ত্তে আনতে।
4. কাজের প্রতি মনোযোগ ধরে রাখুন:
আমাদের মস্তিষ্কের দুইটি অংশ আমাদের মনোযোগের জন্য কাজ করে। সচেতন অংশ যেটিকে ইংরেজিতে
বলা হয় Conscious Part এবং অবচেতন অংশ যেটিকে বলা হয় Unconscious Part। আমরা
যখন নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ রেখে কাজ করি তখন সচেতন অংশটিক আমাদের সেই কাজে ফোকাস রাখতে
সাহায্য করে এবং মনোযোগী রাখে। আমাদের অবচেতন অংশও কিন্তু সর্বদা সচল থাকে। এটি নিজের
মতন করে মস্তিষ্কের বিভিন্ন জিনিস ঘটনাবলী নিয়ে আমাদেরকে জানান দেয়। এইজন্য কখনো নিজের
অপছন্দনীয় কাজে বেশীক্ষণ মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না এবং কাজও দ্রুত শেষ হয় না। তাই চেষ্টা
করুন কাজ শুরু হলে শুধুমাত্র সেই কাজটিতেই মনোযোগ ধরে রাখতে।
5. কাজের জায়গাটি রাখুন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন:
আমরা প্রায়ই অনেকেই একটি ধারণা পোষণ করি, যেই মানুষের টেবিল অগোছালো তারা অনেক বেশী
বুদ্ধিমান এবং কর্মঠ। এই নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। তর্ক বিতর্ক যাই থাকুক, গবেষণায় কিন্তু দেখা গেছে
অপরিছন্ন কিংবা অগোছালো টেবিল আমাদের কর্মদক্ষতা কিছুটা হলেও কমিয়ে দেয়। আমরা অনেক
উদ্যম নিয়ে কোনো একটা কাজ করতে উদ্যত হয়ে টেবিলে বসলে অগোছালো অপরিছন্ন টেবিলের অবস্থা
অনেক সময় সেটি দমিয়ে দেয়, মনোযোগেরও ব্যাঘাত ঘটায়। তাই কাজের জায়গা সব সময় পরিষ্কার
রাখলে দেখবেন আপনি কাজ করতে অনেক উদ্যমী হবেন এবং দ্রুত সময়েই সেটি শেষ করতে পারবেন।
6. কাজের আশেপাশে হালকা মিউজিক চালু রাখুন:
আপনি যদি মিউজিক প্রেমি হোন, তবে এখনই মিউজিক অন করতে করতে আপনার গুরুত্বপূর্ণ একটি
কাজ করা শুরু করে দিন! কাজের সময় হালকা কোনো মিউজিক চালু রাখলে সেটি দ্রুত শেষ হওয়ার
সম্ভাবনা অনেক বেশি। এই ব্যাপারটি কিন্তু শুধু মাত্র নির্দিষ্ট একটি কাজের মনোযোগ ধরে রাখার জন্যই
শ্রেয়। একাধিক কাজ করতে করতে মিউজিকের এই অভ্যাস সুফল নাও বয়ে আনতে পারে। আরেকটি
জিনিস খেয়াল রাখবেন, গান শুনতে শুনতে কাজ করলে লিরিক্স এর কারণে আপনার মনোযোগে ব্যাঘাত
ঘটার সম্ভাবনা বেশি। তাই লিরিক্স বিহীন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকই এইখানে উত্তম। দ্রুত কাজ শেষ করার
জন্য ক্লাসিক্যাল, নেচার, ভিডিও গেম, এম্বিয়্যান্ট মিউজিক শুনতে পারেন।
7. কাজ দ্রত শেষ করার জন্য টাইমার ব্যবহার করুন:
কাজগুলোকে নির্দিষ্ট কিছু সেগমেন্টে ভাগ করে নিন এবং সময়নানুযায়ী সেইগুলো শেষ করার চেষ্টা
করুন। আপনি যদি আপনার প্রতিটি কাজকে সময়ানানুসারে ভাগ করতে পারেন, চেষ্টা করুন নির্দিষ্ট
সময়ের পূর্বেই সেই কাজ গুলোকে শেষ করতে। এইজন্য স্টপওয়াচ বা টাইমার ব্যবহার করতে পারেন।
তাহলে দেখবেন আপনার সময় মাফিক কাজটি শেষ করতে পারছেন। কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই।
8. নিজেকে সব সময় পুরষ্কৃত করার চেষ্টা করুন:
শুনতে কিছুটা হাস্যকর কিংবা বাচ্চামো মনে হলেও, এই বুদ্ধিটা কিন্তু বেশ কার্যকরী। কারণ আমরা
মানুষ স্বভাবতই কিন্তু বাহবা কিংবা প্রশংসা অথবা সহজ ভাষায় বলতে গেলে যেকোনো ধরণের
পুরস্কারের প্রতি আমাদের বরাবরই আকর্ষণ থাকে। নিজেই নিজেকে পুরষ্কৃত করুন। একটি কাজ শেষ
করার জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন। নির্ধারিত সময়ে কাজটি শেষ করতে পারলে নিজেই নিজেকে
পুরষ্কৃত করুন। পুরষ্কারটি যে কোনো ধরনের হতে পারে। সেটা হতে পারে দোকানের চকোলেট কিংবা
লুকিয়ে রাখা আইস্ক্রিম! এই ব্যাপারটি আপনাকে পরবর্তী কাজটি আরোও দ্রুত শেষ করার জন্য
অনুপ্রাণিত করবে।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন। এবার আর দেরী না করে চট করে উঠে ঝটপট করে কাজ করা শুরু করে
দিন ।উপরে দেওয়া উপায় সমূহ খেয়াল রেখে। আপনি খুব দ্রুতই দেখবেন সঠিক সময়েই কাজ গুলো
শেষ করে ফেলেছেন। তাই আর দেরী না করে আজ এখনই শুরু করে দিন।
ভালো থাকবেন।