পণ্য বা সেবাগুলোকে বিজ্ঞাপনসহ বাজার গবেষণা করার মাধ্যমে বিক্রি করার পক্রিয়াকেই মার্কেটিং
বলে। আর ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে ডিজিটাল মিডিয়া ও ডিজিটাল প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে অনলাইনের
মাধ্যমে পণ্য বা সেবার বিক্রয় কাজ পরিচালনা করাকে বুঝায়।
বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ব্যাপক ব্যবহার হলেও আমাদের দেশে এখনও চাহিদা কম। ডিজিটাল
মার্কেটিং প্রয়োগের মাধ্যমে নতুন ভোক্তা তৈরি করা এবং প্রতিযোগীদের সঙ্গে সহজেই প্রতিযোগিতা করা
যায় এমনকি জেনারেল মারকেটিংয়ের চেয়ে তুলনামূলক কম খরচে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে কাজ
করা সম্ভব।
সম্প্রতি ডিজিটাল মার্কেটিং খাতের অবস্থান কোন দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদন
প্রকাশ করেছেন এ খাতের গবেষকরা। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সম্ভাবনা ও ঝুঁকি নিয়ে লিখেছেন- সাইফুল
আহমাদ
বর্তমান সময় তথ্যপ্রযুক্তির সময়। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, পড়াশোনা সবকিছু
এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির সঙ্গে। সময়ের পরিবর্তনে সবকিছুই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে। আর এ তথ্যপ্রযুক্তির
উন্নয়নের ফলে আমরা যে কোনো কাজ খুব সহজেই করতে পারছি।
আর সেই সঙ্গে আমরাও সময়ের সঙ্গে নিজেদের মিলিয়ে নিতে পারছি। যেমন আগে আমাদের কোনো পণ্য
ক্রয় করতে হলে বাজারে-মার্কেটে যেতে হতো। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কল্যাণে এখন আমরা ঘরে বসেই
নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে পারি খুব সহজেই।
ডিজিটাল মার্কেটিং করার জন্য অনেক পদ্ধতি রয়েছে। বিশেষ কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে যেগুলো ডিজিটাল
মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। আসুন সে সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন :
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা SEO মূলত গুগল, ইয়াহু বিং বা অন্য কোনো সার্চ ইঞ্জিন অনুসন্ধান
ফলাফলগুলো পর্যালোচনা করে থাকে। আজকের প্রতিযোগিতার বাজারে পণ্যের মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে
এসইও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।এসইওর মাধ্যমে আপনার পণ্যকে গুগল সার্চের সবচেয়ে ওপরে
নিয়ে আসবেন, তাহলে আপনার পণ্যের বিক্রিও বৃদ্ধি পাবে কারণ বর্তমানে মানুষ কোনো পণ্য কেনার
আগে গুগল থেকে সার্চ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। গুগল তার তথ্যগুলো নিয়মিত আপডেট করে।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং :
আমরা অনেক ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি, যেমন- Facebook, Twitter, Instagram,
Google Plus। এই সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমরা একজন অন্যজনের
সঙ্গে বা একজন অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার্থে এই মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে
থাকি।এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে কাজে লাগিয়ে মার্কেটিং করা বা যে পদ্ধতি অনুসরণ করে
আমরা প্রচারণা করি তাকেই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বলে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং :
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের এমন একটি পদ্ধতি বা সিস্টেম যেখানে আমাদের
নিজেদের কোনো প্রোডাক্ট নেই, আপনি সেখানে অন্য কোনো ব্যক্তি বা তাদের ওয়েবসাইট থেকে প্রোডাক্ট
নিয়ে নিজের ওয়েবসাইট বা পেজ এনে প্রমোট করবেন এবং কেউ যদি আপনার প্রমোট করা লিংক বা
ব্যানার থেকে ক্লিক করে ওই প্রোডাক্টটি ক্রয় করে তাহলে আপনি সেখান থেকে কিছু টাকা কমিশন
হিসেবে পাবেন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে রাতারাতি অনেক আয় করা সম্ভব নয়। ধৈর্যসহকারে কাজ
করে যেতে পারলে সফলতা আসবে।
কন্টেন্ট মার্কেটিং :
কন্টেন্ট বলতে আমরা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ব্লগ পোস্ট, ভিডিও, ই-বুক ইত্যাদিকে বুঝে থাকি।
আমরা যখন অনলাইনে কোনো Content নিয়ে মার্কেটিং করি তখন তাকে Content মার্কেটিং
বলে।Content এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জন্য অবশ্যই Content
তৈরি করতে হবে। এমনকি Search engine optimization, Social Media marketing সব
জায়গাতেই Content প্রয়োজন। Content ছাড়া ডিজিটাল মার্কেটিং অসম্ভব।
ভাইরাল মার্কেটিং :
বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ, এ যুগকে ভাইরাল যুগ বলেও হাস্যরস করতে শোনা যায় প্রায়ই। আপনি যেই
সেক্টরেই থাকুন না কেন, আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাফল্যে ভাইরাল মার্কেটিং ও কনটেন্টের গুরুত্ব
অপরিসীম। এ ভাইরাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে ছবি বা লেখাকে প্রোমোট করতে তেমন খাটনি করার
প্রয়োজন হবে না। মানুষই ভাইরাসের মতো কনটেন্টটি ছড়িয়ে দেবে।
ইমেইল মার্কেটিং :
ইমেইল মার্কেটিং হচ্ছে একটি অনলাইন মার্কেটিং পদ্ধতি যার মাধ্যমে আপনি আপনার পণ্যের এবং সেবার
প্রচার করতে পারবেন এবং আপনার সাইটের প্রচার করতে পারবেন। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের
ছোট বড় অসংখ্য প্রতিষ্ঠান এ পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের আয় বৃদ্ধি করছে। ইমেইল মার্কেটিং হল ক্রেতাদের
কাছে পণ্যের তথ্য পৌঁছানোর সবচেয়ে কাযকরী পদ্ধতি।
কোনদিকে যাচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং :
বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ দুই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গুগল আর ফেসবুককে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বিভিন্ন স্থানে
নানা অভিযোগ আর কড়াকড়ির মধ্য দিয়ে পাড়ি দিতে হচ্ছে। দুই জায়ান্ট ভোক্তাপণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান
প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল এবং ইউনিলিভার ইতিমধ্যে অনলাইন বিজ্ঞাপন নিয়ে জালিয়াতির বড় অভিযোগ
পেয়েছে। অনুপযুক্ত অনলাইন কন্টেন্টের সামনে বিজ্ঞাপন দেখানো হলে ব্র্যান্ডের সুনাম ঝুঁকির মুখে পড়তে
পারে।
এ বিষয়টি বিপণনকারীদের হতাশও করে দিয়েছে আর গ্রাহকদের লক্ষ্য করার ক্ষেত্রে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ
আনতে তাদের উৎসাহ জোগাচ্ছে। অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান এ বাজারে নিরাপত্তা নিয়ে পদক্ষেপ নেয়ার
দরকারও তৈরি হচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যম, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের মতো ভয়েস অ্যাকটিভেটেড অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে
সরাসরি ভোক্তাদের লক্ষ্য করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুযোগ দিচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং ।
ফলে এ খাতের চাহিদাও বাড়ছে। ফলে ভবিষৎতে সবাই অনলাইনের মাধ্যমে কেনাকাটি করবে এবং
সকল কাজ অনলাইনের মাধ্যমে করবে।
তাই বলা যায় ডিজিটাল মার্কেটিং এখন বড় ধরনের গুরুত্ব বহন করছে।
ভাল থাকবেন