আজকাল আমরা একটি শব্দ শুনে থাকি আর তা হচ্ছে “ডিজিটাল মার্কেটিং” প্রথমেই আমদের জানা
দরকার এই ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে আমরা কি বুঝি। সরল ভাষায়, ডিজিটাল মার্কেটিং ইলেকট্রনিক
মিডিয়ার এক বা একাধিক ফর্ম মাধ্যমে পণ্য বা ব্র্যান্ডের প্রচার করার কে বুঝায়। টিভি,রেডিও,মোবাইল
এবং ইন্টারনেট – এ সকল মাধ্যমে আমরা “ডিজিটাল মার্কেটিং” করে থাকি। ডিজিটাল মিডিয়া বলতে
আমরা প্রথানত ই-মেইল, মোবাইল অ্যাপ, ওয়েব সাইট ও সামাজিক মিডিয়া কে বুঝায়। যদিও টিভি ও
রেডিও ডিজিটাল মিডিয়া খুবই জনপ্রিয় মাধ্যম।কোম্পানীর পণ্যের প্রসারের জন্য আমরা বিভিন্নভাবে
মার্কেটিং করি যেমনঃ লিফলেট, পোস্টার ইত্যাদি। বর্তমানে ডিজিটাল যুগ। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে
সবচাইতে বেশি মানুষের কাছে পণ্যের প্রচার করা যায় এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়েই সবচাইতে বেশি
ব্যবসায়িক সফলতা পাওয়া যায়। তাই আজকে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে কিছু কৌশল নিয়ে এখানে
আলোচনা করব । আশা করি আপনারা ভাল করে পড়বেন ।
ডিজিটাল মার্কেটিং করার জন্য প্রয়োজনীয় কৌশল সমূহ সর্ম্পকে আলোচনা :
যদি আপনি আপনার ব্রান্ডের প্রসার চান, তাহলে প্রথম কাজ হিসেবে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করুন,
যেখানে আপনার ব্যবসার সকল তথ্য পাওয়া যাবে। ডিজিটাল মার্কেটিং করার জন্য প্রয়োজনীয় কৌশল
সমূহ সর্ম্পকে আলোচনা করা হলো :
ডিজিটাল মার্কেটিং করার প্রয়োজনীয় কৌশল:
– আপনার ব্যবসার পরিচিতির জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। এমনভাবে ওয়েবসাইটটি তৈরি
করতে হবে যেন প্রফেসনাল লুক থাকে। ভিজিটর যেন পছন্দ করে।
– ভিজিটরদের জন্য সহজভাবে ব্যবহার উপযোগী ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে।
– নিয়মিত সঠিক তথ্য দিয়ে ওয়েবসাইটটি সবসময় আপ-ডু-ডেট রাখতে হবে।
– কোম্পানীর কাজের মান অনুযায়ী ডিজাইন সুন্দর করতে হবে।
– এমনভাবে ওয়েবসাইটের কনটেন্ট তৈরি করতে হবে যাতে ক্লায়েন্ট আপনার পণ্যের ব্যপারে
আকর্ষণবোধ করে।
– প্রতিটি পেজে “call to action” যুক্ত করতে হবে
যাতে আপনার ভিজিটরকে পণ্যটি কিনতে কিংবা কিনার ব্যপারে যোগাযোগ করতে উৎসাহবোধ করে।
– ওয়েবসাইটে ভিজিটর ট্রেকিং করার জন্য যেকোন টুলস যেমনঃ গুগল এ্যানালিটিকস ব্যবহার করতে
হবে যাতে ভিজিটরদের গতিবিধি লক্ষ্য করা যায়।
– ওয়েবসাইট তৈরিতে এমন টেকনোলজী ব্যবহার করতে হবে যাতে তা ভিজিটর এবং সার্চইঞ্জিন
উভয়ের জন্য উপযোগী হয়।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য ব্লগিং এর প্রয়োজনীয়তা ও কৌশল:
ডিজিটালভাবে উপস্থিতি ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জন্য বর্তমানে ব্লগিং অত্যন্ত শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে
কাজ করে। মানুষের কাছে আপনার পণ্যের তথ্য পৌছে দেয়ার জন্য ব্লগ সব চাইতে কার্যকরী ভূমিকা
পালন করে থাকে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য ব্লগিং এর কিছু প্রয়োজনীয় কৌশল:
– আপনি যদি ব্লগিংয়ে নতুন হন, তাহলে অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেটে এ সম্পর্কিত অনেক
উপকারী তথ্য পাবেন। সেগুলো পড়ে জেনে নিন কিভাবে আপনার ব্লগ সাজাবেন এবং কাজ করবেন?
– এবার আপনার ব্লগকে যেকোন একটি বিষয়ের উপর এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে যেকোন
ভিজিটর সে সম্পর্কিত যেকোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায়।
– গেস্ট ব্লগিং করলে সবচাইতে বেশি বেনিফিটেড হবেন। এগুলোতে সবসময় কিছু নির্দিষ্ট পাঠক থাকে।
– ব্লগের প্রতিটা নতুন পোস্টের পাবলিশের পর সেটা সাথে সাথে বিখ্যাত সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতে শেয়ার করতে হবে।
– এমনভাবে ব্লগের পোস্টগুলো তৈরি করতে হবে যেন সেটা পণ্যের মার্কেটিং সম্পর্কিত কোন কিছু মনে
না হয়। ক্লায়েন্টের জন্য উপকারী, তথ্যবহুল পোস্ট হতে হবে।
– নিয়মিত পোস্ট দিতে হবে। সেটা একটা রুটিন অনুযায়ী করলে ভাল হয়ে। যেমন, ৩দিন পর, ১ সপ্তাহ
পর। তাহলে নিয়মিত ভিজিটর আসবে নতুন কিছু পাবার আশায়।
– সম্ভব হলে নিয়মিত কিছু অফার দিন যাতে আপনার ব্লগটি জমজমাট থাকে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য এসইও এর প্রয়োজনীয়তা ও কৌশল :
আজকের প্রতিযোগিতার বাজারে পণ্যের মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে এসইও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে।
এসইওর মাধ্যমে আপনার পণ্যকে গুগল সার্চের সবচাইতে উপরে নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে আপনার
পণ্যের বিক্রিও বৃদ্ধি পাবে কারন বর্তমানে মানুষ কোন পণ্য কেণার আগে গুগল থেকে সার্চ দিয়ে সিদ্ধান্ত
নিয়ে থাকে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য এসইও এর কিছু প্রয়োজনীয় কৌশল :
– অনলাইনে আপনার কনটেন্ট, যেকোন পোস্ট কিংবা ফোরাম ডিসকাশনে যেন আপনার টার্গেটেড
কিওয়ার্ডের উপস্থিতি থাকে যেন খুব সহজে আপনার টার্গেটেড পাঠক আপনাকে খুজে পেতে পারে। সে
দিকে খেয়াল রাখতে হবে
– কখনও ডুপ্লিকেট কনটেন্ট ব্যবহার করা উচিত না। এটা এসইওর ক্ষেত্রে খুবই ক্ষতিকর হবে।
– ওয়েব সাইটে টাইটেল ট্যাগ, মেটা ট্যাগের ব্যবহার করতে। এটা এসইও ক্ষেত্রে আপনাকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
– আপনার ব্লগের সাথে আপনার পণ্যের ওয়েবসাইটের একটি সংযোগ তৈরি করতে হবে।
– গুগলের নিয়মিত নতুন আপডেট সম্পর্কে সচেতন থাকুন, নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে।
টার্গেটকৃত ক্রেতা পাওয়ার জন্য ইমেইল মার্কেটিং করুনঃ
ইমেইল মার্কেটিং হল আপনার ক্রেতাদের কাছে আপনার পণ্যের তথ্য পৌছানোর সবচাইতে কার্যকরী
পদ্ধতি।
ইমেইল মার্কেটিং ক্ষেত্রে কিছু প্রয়োজনীয় কৌশল :
– বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বয়সের কিংবা বিভিন্ন ক্যাটাগরির মানুষের মেইল এড্রেস জোগার করতে হবে।
– যে পণ্যের মার্কেটিং করতে চান, সেটি নিয়ে ভালভাবে গবেষণা করতে হবে।
– অন্য কোম্পানীর একই পণ্যকে নিয়ে ও তাদের মার্কেটিং কৌশল নিয়ে গবেষণা করতে হবে।
– সবচাইতে সহজভাবে আপনার পণ্যের গুণ বর্ণনা করতে হবে আপনার মেইলের মাধ্যমে।
পণ্য সর্ম্পকিত বিষয় ছাড়া অন্য কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন না। জটির কোন পণ্য নিয়ে
আলোচনা না করায় ভাল।
সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের প্রয়োজনীয় কৌশল:
বর্তমানযুগে ব্যবসার প্রসারের ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষমতা বলে শেষ করা যাবে না। আপনার
ব্যবসায়িক পণ্যের প্রচারের জন্য এর চাইতে ভাল জায়গা, এখনও নাই। ডিজিটাল মার্কেটিং করার জন্য
সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের প্রয়োজনীয় কৌশল সমূহ গুলো হলো:
– একটি এ্যাক্টিভ কমিউনিটি তৈরি করতে হবে যেখানে সকল মেম্বার এ্যাক্টিভ থাকবে। ফেসবুকে
কমিউনিটি তৈরি করার জন্য গ্রুপ কিংবা পেজ তৈরি করতে হবে। এমনি করে টুইটার, গুগল প্লাস কিংবা
লিংকেডিনে কমিউনিটি তৈরি করতে হবে।
– সকল সোশ্যাল মিডিয়াতে সক্রিয়ভাবে নিয়মিত অংশগ্রহণের জন্য ম্যানেজমেন্টটুলস (HootSuite,
TweetDeck) ব্যবহার করতে হবে যা আপনার সময়কে সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে ভাল ফলাফল বের
করতে সাহায্য করবে।
– আপনার টার্গেটকৃত ক্রেতাদের সাথে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে বিভিন্ন আলোচনাতে অংশগ্রহন করতে হবে।
– কাউকে ইমেইল পাঠানোর ক্ষেত্রে আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার পেজ কিংবা গ্রুপের লিংকগুলো সিগনেচার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
– আপনার নিজের ওয়েবসাইটে কিংবা কোন ব্লগে পোস্ট দেয়ার ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার লাইক বাটন যুক্ত করতে হবে।
এছাড়া আরও কিছু কৌশল আছে । যার বিষয়ে আপনাদের জানা দরকার । সে সর্ম্পকে আলোচনা করা হলো:
1। নজর রাখুন ভিডিও মার্কেটিং-এর দিকে
বাংলাদেশে এখন ইন্টারনেট স্পিডও বেড়ে গেছে। সেই সাথে হাতের কাছের ডিভাইস থেকে ভিডিও দেখার
সুযোগও বেড়ে যাচ্ছে। তাই ইউটিউব বা ফেসবুকে ভিডিও শেয়ার করা হলে সেটি মানুষের কাছে আরও
দ্রুত পৌঁছে যাওয়ার সুযোগ থাকছে। প্রতিদিন ইউটিউবে ৪ বিলিয়ন ভিডিও দেখা হয় ইউটিউবে। তাই
নতুন নতুন ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ভিডিও মার্কেটিং এর জুড়ি নেই। কারণ ভিডিও যদি সুন্দর হয়
সেটি অনেকেই শেয়ার করবে। এতে করে আরও বেশী মানুষের কাছে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের নামকে
পরিচিত করার সুযোগ থাকছে। আপনি এখানে কাজ করতে পারেন । এটি একটি গুরুত্বর্পূণ জায়গা।
2। মার্কেটিং এর বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে:
একেকটি পণ্যের মার্কেটিং করার প্রক্রিয়া একেক রকম হওয়া প্রয়োজন। অনেক সময় দেখা যায় কোন
একটি বিজ্ঞাপনের ছবিতে মানুষের মুখ ব্যবহার করা হলে আরও বেশী আকর্ষণীয় হওয়ার উপায় থাকে।
3। সমস্যা খুঁজে বের করতে হবে
একটি প্রতিষ্ঠান মার্কেটিং এর সময় কি কি বিষয় নিয়ে কাজ করতে চায় এবং কি কি সমস্যা ধরা পড়ছে
তা নিয়ে আগে থেকেই পরিকল্পনা করতে হবে। এবং সমাধানের পথ বের করে কাজ করতে হবে।
4। ডিজিটাল মিডিয়া মার্কেটিং-এ সঠিক ব্যবস্থাপনা
প্রত্যেকদিন নির্দিষ্ট সময় পর পর মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট গুলোকে আপডেট করা উচিৎ। সোশ্যাল মিডিয়া
কন্টেন্ট পোস্ট করা ক্ষেত্রে অটোমেটিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করা উচিৎ।
5। কাজের লক্ষ্য স্থির করতে হবে
প্রত্যেকটি মার্কেটিং প্রক্রিয়ায় কিভাবে সফলতা আসবে আগে থেকেই সে কাজের জন্য লক্ষ্য স্থির করতে
হবে। আপনি কি কাজ করবেন? কিভাবে করবেন? কাজ শুরু আগে লক্ষ্য স্থির করতে হবে।
সকল তথ্য বিশ্লেষণ করলে আমরা খুব সহজে বুঝতে পারি ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব। কোন পণ্য বা
সেবার তথ্য আমরা খুব সহজেই আমাদের নির্ধারিত গ্রাহককে খুব সহজে জানাতে পারি কেবল ডিজিটাল
মার্কেটিং এর মাধ্যমে।
ভাল থাকবেন