আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং করতে চান তবে এ লেখাটি আপনার জন্য। তবে ডিজিটাল মার্কেটিং
আসলে কি সে ব্যাপারে আপনার যদি ভালো ধারণা না থাকে, তাহলে এই আলোচনাটি আপনার কাছে
একটু খাপছাড়া লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং কী বা কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ এ সবকিছু সুন্দর
ভাবে জানার জন্য একনি পড়ে নিন।
** ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং কেন করবেন?
জীবনে যে কোন ক্ষেত্রেই একটি অবস্থান তৈরী করতে হলে সে বিষয়ে কিছু দক্ষতা থাকা অবশ্যই
প্রয়োজন । এখন কার সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রীর চেয়ে কাজের দক্ষতা ও যোগ্যতাই সব জায়গায় বেশি
প্রাধান্য দিয়ে থাকে। অসংখ্য প্রতিযোগীর মধ্য থেকে একজন ডিজিটাল মার্কেটার হতে হলে আপনাকে
অবশ্যই কিছু বিষয়ে দক্ষ হতে হবে, আজকের আলোচনায় সেসব নিয়ে কথা বলবো। তাহলে আর কথা
না বাড়িয়ে এখন দেখে নিই একজন ভালো ডিজিটাল মার্কেটার হতে হলে আপনাকে কী কী দক্ষতা অর্জণ
করতে হবে। যা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য খুবি প্রযোজনীয়।
1.সৃষ্টিসংক্রান্ত তথ্য (creative ) :
একজন ভাল ডিজিটাল মার্কেটার হতে হলে আপনাকে একটু ক্রিয়েটিভ অবশ্যই হতে হবে। একটি
প্রোডাক্ট নিয়ে আপনি অনেকবার কথা বললে বা লিখলে সেক্ষেত্রে একই কথা বারবার বললে মানুষের
বিরক্তি হয়ে চলে আসবে।তাই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে একটি প্রোডাক্ট বা সেবার মধ্য অন্যদের
চোখে পড়ছে না এরকম যদি কোন গুণ বের করতে পারেন, তাহলে কেবল মাত্র সেটি মানুষের মনোযোগ
আকর্ষণ করতে বাধ্য। তাই এ ব্যাপারে দক্ষতা বৃদ্ধি জরুরী।আপনি সেদিকে খেয়াল রাখবেন যাতে কোন
বিষয় আপনার কাছ থেকে বাদ না পড়ে।
2.যোগাযোগ বৃদ্ধি করা (Communication) :
ডিজিটাল মার্কেটিং এর পরিধি অনেক বিস্তৃত। তাই এখানে সফলতার সাথে যোগাযোগের একটি
ওতপ্রোত সম্পর্ক আছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে আপনাকে সবর্দা দুইটি বিষয়কে মাথায় রাখতে হবে।
তাহলো এক, নিয়মিত বা ধারাবাহিকভাবে ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। দুই, স্পষ্টভাবে
আপনার দেওয়া বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভাল দক্ষতা অর্জন করতে পারলে
সহজেই ভালো মানের একজন ডিজিটাল মার্কেটার হয়ে উঠা সম্ভব।
3.ভালো মানের কন্টেন্ট লেখা এবং ভিডিও (Good quality content and video):
ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রাণ বলা যেতে পারে কন্টেন্টকে। একজন ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে কাজ হচ্ছে
একটি প্রোডাক্ট বা সেবাকে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আর এজন্য
ডিজিটাল মার্কেটিং এ কন্টেন্টের বিকল্প আর কিছু নেই। আপনার লেখা ব্লগপোস্ট , প্রোডাক্ট বা সার্ভিস
এর বর্ণনা , রিভিউ, ছবি , ভিডিও , ইনফোগ্রাফ ইত্যাদি সবকিছুই কন্টেন্ট বুঝায়। কন্টেন্ট বা ভিজুয়াল
কন্টেন্ট বিশেষ করে ভিডিও তৈরী করার ক্ষেত্রে আপনার পারদর্শিতা ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে
আপনাকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।একটু খেয়াল করলে দেথতে পারবেন গুগল, আমাজন, আপল,
স্যামসাঙ, অ্যাডিডাস ইত্যাদি সব নামকরা কোম্পানিই এই ট্রেন্ড ব্যবহার করছে। কেননা মানুষ অল্প
সময়ে সহজভাবে প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানতে চায়। তাই আমি বলি আপনাকে একদম প্রোফেশনাল
ভিডিওমেকার হতে হবে না, মোটামুটি ভাবে ভিডিও তৈরী করা, এডিট করা বা ক্যামেরার সামনে
প্রেজেন্টেশন দেওয়া ইত্যাদি যোগ্যতা অর্জন করলেই হবে। আর এসব কাজের জন্য সেরা কিছু ভিডিও
এডিটিং সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। পাশাপাশি ইনফোগ্রাফ তৈরী, ছবি তৈরী এবং লেখালিখি
অভ্যাসটিও আয়ত্ত করার চেষ্টা করুন।
4.ডাটা এনালাইসিস (Data Analysis):
আপনি যতক্ষণ আমার এই লেখাটি পড়ছেন ততক্ষণে অনলাইনে মিলিয়ন পরিমাণ নতুন ডাটা এসে যুক্ত
হচ্ছে এবং প্রতিমুহূর্তেই তা বেড়ে চলছে। এই বিপুল পরিমাণ ডাটা সংগ্রহ করে, বিশ্লেষণ করে সেটি কাজে
লাগানোর মতো তৈরী করাটা হচ্ছে ডাটা এনালাইসিস।আপনি যদি এটা সর্ম্পকে ভালোভাবে জানতে না
পারেন তবে আপনার পক্ষে ভাল ডিজিটাল মার্কেটার হওয়া সম্ভব নয়। তাই ডাটা এনালাইসিস সম্পর্কে
দক্ষতা অর্জণ করতে হবে আগে। গুগল, ফেসবুক, টুইটার, অ্যামাজন, আলীবাবা ইত্যাদির সব প্রতিষ্ঠানে
সাফল্যের সাথে কাজ করছে তার মূল কারন হচ্ছে ভালভাবে ডাটা এনালাইসিস। মনে রাখবেন, ডাটা
এনালাইসিসে আপনি যতো বেশি দক্ষ হবেন, ভবিষ্যতে আপনার চাহিদা তত বেশি থাকবে।তাহলে এগিয়ে
চলুন।
5.এস সি ও এবং এস ই এম (SEO and SEM):
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) এবং সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (SEM) একটি অপরিহার্য বিষয় ডিজিটাল
মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে । এই সেক্টরে আসতে চাইলে আপনাকে অন্তত SEO এবং SEM এর ব্যাপারে বেসিক
জ্ঞান থাকতেই হবে। কারন কন্টেন্টকে মানুষের কাছে পৌঁছানোর অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে, SEO
এবং SEM। SEO এবং SEM এ আপনি দক্ষ হলে ঠিক এই কাজটিই করতে পারবেন। এ দুইটিই
আপনাকে ডাটা এনালাইসিস এবং কন্টেন্ট মার্কেটিং সম্পর্কে কৌশলী করে তুলবে। এবং আপনার
কন্টেন্টকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
6.সময়ে প্রতি মনোযোগ (Time Management) :
ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে বেশিরভাগ সময়ই আপনাকে অনলাইনের সাথে যুক্ত থাকতে হবে। তাই
সময়টাকে কিভাবে আরও বেশি করে কাজে লাগনো যায় সেটি জানা জরুরী। সময়কে সঠিকভাবে কাজে
লাগানোর জন্যে গুরুত্বপূর্ণ ৫টি টাইম-ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার থেকে পছন্দ মতো যে কোনটি ব্যবহার
করতে পারেন।দিনে অন্তত পাঁচটি কাজ ঠিক করুন। একটি কাজ ধরলে সেটি শেষ করার আগে কোন
নোটিফিকেশন, ই-মেইল, অ্যাড এসবের পিছনে সময় নষ্ট করবেন না। টাইম ম্যানেজিং এর এই দক্ষতা
ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে আপনার ক্যারিয়ারকে তো এগিয়ে নিবেই, সেই সাথে জীবনেও এর চমৎকার
সব ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ করতে পারবেন।
উপরে আলোচনা করা বিষয়গুলো আসলে খুব কঠিন কিছু নয়। তবে অন্য সবকিছুর মতোই এই
বিষয়গুলোতে দক্ষতা অর্জণ করতে হলে এর পিছনে আপনাকে শ্রম ও সময় ব্যয় করতে হবে। যথাযথ
দক্ষতাই আপনাকে একজন ভালো ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তুলবে।
ভাল থাকবেন।