জেনে নিন যে ৭ টি খারাপ দিক আপনাকে ব্যক্তিত্বহীন করে তুলে পারে।

মানব চরিত্রের কিছু কিছু গুণ আছে যেগুলো সময়ের সাথে নিজেদের অজান্তেই মানুষের ব্যক্তিত্বকে

ক্রমান্বয়ে করে তুলে জড়, অন্তঃসারশূন্য এবং অস্তিত্বহীন। গুণ বলাটা বাহুল্য বটে, এই আচরণগুলো

মানুষের ভেতরটাকে যেমন করে তুলে জড়, বাহিরটাও তেমনি করে তুলে রুগ্ন ও পরিশ্রান্ত। গুণ কম,

দোষগুলো আমরা নিত্যই আমাদের চারপাশে বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী এমনকি নিজেদের মধ্যেও অহরহ

দেখতে পাই। এরকম কতকগুলো ব্যক্তিত্ববিদ্ধংসী গুনের কথা তুলে ধরা হল:

1. পরিকল্পনাহীনতা ও দূরদর্শিতা হীনতা :

 জীবনে চলার পথে ভবিষ্যৎকে চিন্তা করে আজকের পরিকল্পনা করে নেওয়াটাই শ্রেয় কারণ আমাদের

আজকের পরিকল্পনা, আজকের পরিশ্রম আমাদের ভবিষ্যতের লক্ষ্যকে, ভবিষতের চাওয়া পাওয়াকে

বাস্তবায়িত করবে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, দূৰদৰ্শিতাহীনতা এবং ভবিষ্যতের জন্য আজকের

পরিকল্পনার অভাব নিতান্তই একটি খারাপ গুণ। এটি মানবচরিত্রের অপরিপক্কতাকেই তুলে ধরে মাত্র।

মানবব্যক্তিত্বের দুর্বল দিকটিকে আঙ্গুল ঠেকিয়ে দেখিয়ে দেয়। আজকের পরিকল্পনা যতটা গোছানো হবে,

ভবিষতে পরিকল্পনাটির বাস্তবায়ন ততটাই দৃঢ় হবে। 

2. অহংকার :

হীনমন্যতা ও অহংকার ২ টি বিপরীত শব্দ হলেও কাকতালীয়ভাবে অহংকার নামক গুনটিও কিন্তু

আমাদের ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রকে অসার করে তোলার জন্য যথেষ্ট ।এই একটি খারাপ গুণ আমাদের নিজেদের

অজান্তেই আমাদের ব্যক্তিত্বকে করে তুলে আরো দূষিত, জন্ম দেয় আরো কতক খারাপ গুনকে। যখন

আমরা নিজেদের অন্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ মনে করি তা অর্থেই হোক, জ্ঞানেই হোক কিংবা বংশপরিচয়ের

মতো তুচ্ছ বিষয়েই হোক না কেন, কিংবা যখন কোনো কাজের প্রতি আমাদের আত্মবিশ্বাস নয় বরং

মাত্রাধিক্য আত্মবিশ্বাস চলে আসে, কিংবা আমরা আত্মচর্চাকে আমাদের বক্তব্যের মূল বিষয়ে বানিয়ে

ফেলি, তখনি বুঝে ফেলতে হবে যে আমরা অহংকারের কবলে পড়ে গিয়েছি। আর একবার অহংকার মনে

গেঁথে গেলে এর থেকে পরিত্রান সহজ নয়।

3. হীনমন্যতা :

হীনমন্যতা বলতে নিজেকে ছোট করে দেখা বোঝায়। এটি নিঃসন্দেহে একটি খারাপ গুণ যা আমাদের

ব্যক্তিত্বকে আমাদের নিজেদের অজান্তেই অন্তঃসারশূন্য করে  তুলে। এই হীনমন্যতা শুরু হয় গুটিকয়েক

আরো কতকগুলো খারাপ গুণ দিয়ে, আচরণ দিয়ে যেগুলো আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের

চলাফেরায় বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী এমনকি নিজেদের মুখ দিয়ে বলা কতগুলো সাধারণ কথা দিয়েই ধারনা

করে নিতে পারি। আমাদের আত্মবিশ্বাস যতটা সংকীর্ণ হবে, আমাদের নিজেদের যোগ্যতার প্রতি বিশ্বাস

ততটাই দুর্বল হবে এবং আমরা বরাবরই হীনমন্যতায় ভুগবো। ক্ষোভ, দুঃখ কিংবা কষ্টকে যতটাই মনের

ভেতর পুষে রাখবো, কারো সাথে ভাগাভাগি করে নিবো না, আলোচনা করব না ততটাই আমরা

হতাশায় পড়ে যাব। হতাশা আমাদেরকে ভেতর দুর্বল করে শেষ পর্যন্ত ওই হীনমন্যতার দিকেই কিন্তু ঠেলে

দিবে। 

4. অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ঃ

প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় এবং বাজেট তৈরী না করে পরিকল্পনাহীনভাবে অর্থের অপচয়

নিঃসন্দেহে একটি খারাপ গুণ যা আজকে না হোক, ভবিষতে ঠিকই কঠিন বাস্তবতাকে চোখে আঙ্গুল

ঠেকিয়ে দেখিয়ে দিবে। এটি ব্যক্তিত্বের বিশালতার নয় বরং অজ্ঞতার এবং মূর্খতার পরিচায়ক। অর্থের

অপচয় কখনোই কোনো সুফল বয়ে আনতে পারে না বরং হয় দুর্ভোগের কারণ মাত্র। আজকের

আতিশায্যে ভবিষ্যতের কঠিন উপলব্ধি কাজ করে। সহজ কথা, আজকে টাকা ইচ্ছামতো উড়ালে কালকে

অনটনের দেখা মিলতে পারে। তাই অর্থ ব্যয় নয়, সঞ্চয়ের দরকার, দরকার বাজেটের, দরকার

পরিকল্পনার। এই বোধটুকু না আসলে অপচয় করার মাত্র কিছু অবশেষে থাকে না।

5. পরনিন্দা ও যুক্তিহীন সমালোচনাঃ

যুক্তিহীন সমালোচনা এবং পরচর্চা একজন মানুষের ব্যক্তিত্বকে ক্রমান্বয়ে কুৎসিত করে তোলে। তার

কথোপকথন, তার আলোচনা, তার আড্ডা সবকিছুর মধ্যেই থাকে অন্যের নিন্দা, অন্যের সমালোচনা,

অন্যের দোষ ত্রুটির প্রতি ব্যঙ্গাত্মক হাসি ও উপহাস। পরচর্চার বিষয়টি তার নিজের কাছে যতটাই

আনন্দের মনে হোক না কেনো, পারিপার্শ্বিকের নিকট তা তার ব্যক্তিত্বের একটি কুৎসিত উপস্থাপনা মাত্র।

6. সময়ের অপব্যবহারঃ

 সময়ের অপব্যবহার বরাবরই একটি খারাপ গুণ যা আমাদের ভবিষতের অনিশ্চয়তার কারণ হয়ে

আমাদের আচরণ ও ব্যক্তিত্বকে ক্রমান্বয়ে দুর্বল করে তুলে। এই খারাপ গুনটি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা

সত্ত্বেও আমরা নিশ্চিন্তে এটিকে অব্যাহত রাখি। কাজের প্রতি অনীহা বলি কিংবা আলস্য, শত শত এরকম

যুক্তিহীন কারণে আমরা নিয়মিত সময়ের অপব্যবহার করি কিন্তু এর উপলব্ধি আমাদের তখন হয়ে যখন

বর্তমান সময়ের অপব্যবহার ভবিষতের কঠিন বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায়। সুন্দর জীবনের গোছানো বর্তমান

এবং উজ্জ্বল ভবিষৎ আজকের সময়ের কাজে লাগানোর উপরি কিন্তু নির্ভর করে।

7. আসক্তিঃ

আসক্তি এমন একটি খারাপ গুণ যা কেবল আমাদের ব্যক্তিত্বকেই ধ্বংস করে দেয় তা নয় বরং আমাদের

জীবনকেও অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। কিছু কিছু আসক্তি আছে যা আমাদের সময়কে নষ্ট করছে এবং

দীর্ঘমেয়াদিভাবে আমাদের ভবিষৎও বটে। আবার এমন কিছু কিছু আসক্তি আছে যা আমাদের শরীর,

সাস্থ এবং সম্পূর্ণ জীবনটাকেই ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শুনতে বেশ অবাক লাগলেও সত্যি, এগুলো

সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান আমাদের সবারই আছে কিন্তু ‘আসক্তি’ বলেই হয়তোবা এগুলো থেকে বেরিয়ে

আসাটা অতটা সহজ হয়ে ওঠে না। কিন্তু যতটা বেশি এই আসক্তিগুলোকে আমরা আঁকড়ে ধরে রাখব,

ক্ষতির ঝুলিটা ততটাই বেশি করে ভরতে থাকবে।

আলোচনায় আসা এই ব্যক্তিত্ব বিধ্বংসী গুণ গুলো আমাদের কেবল বর্তমানকে নয় বরং ভবিষৎকেও

অন্ধকারে ঠেলে দেয়। তাই এগুলো থেকে বেরিয়ে আসাটা খুবই জরুরি। বেরিয়ে আসার পথটা কঠিন আর

শক্ত মনে হলেও অসম্ভব কিছু নয়। আপাতদৃষ্টিতে কঠিন পথটাও পার করা যাবে, এই আচরণ, খারাপ

গুণগুলো থেকে বেরিয়ে আসা অবশ্যই যাবে যদি মনের জোর এবং আত্মবিশ্বাস অটল থাকে।

ভালো থাকবেন।

Leave a Comment