জীবনে চলার পথে কিছু কিছু অভ্যাস আমাদেরকে এমন ভাবে তৈরী করে যে, আমরা যেকোনো নতুন
পরিবর্তন কিংবা যেকোনো চ্যালেঞ্জের প্রতি ইতিবাচক হয়ে দাঁড়াই, সাফল্যের পথটা আমাদের জন্য হয়ে
উঠে আরো স্পষ্ট। অভ্যাস আমাদের আচরণকে, আমাদের কার্যক্রমকে পরোক্ষভাবে নয় বরং প্রতেক্ষভাবে
নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা যা আমাদের অভ্যাসে নিয়ে আসি তাই আমাদের বর্তমানকে নিয়ে চলে, ভবিষ্যৎকে
আজ থেকে ঘুছিয়ে দেয়। তাই অভ্যাসের নির্বাচনটাও হয়ে উচিত যথার্থ। সেই কিছু কিছু অভ্যাসগুলোই
এখানে তুলে ধরা হলো মাএ:
১. জীবনের লক্ষ্য র্নিধারন:
কি, কিভাবে এবং কবে?
হতে পারে লক্ষ্যটি জীবনের ভবিষ্যত কাঠামো, হতে পারে লক্ষ্যটি দৈনন্দিন জীবনের ১ টি ছোট
মাইলফলক। হতে পারে লক্ষ্যটি মাননীয় স্পিকার হওয়ার স্বপ্ন, হতে পারে লক্ষ্যটি ৫ কেজি ওজন
কমানোর প্রচেষ্টা। লক্ষ্যটি যেরকমই বা হোক না কেন, তা যেন জবাবদিহি দেয় এই ৩ টি প্রশ্নের কাছে-
লক্ষ্যটি কি?
কিভাবে লক্ষ্যটি
বাস্তবায়িত হবে?
কবে এই লক্ষ্যটি বাস্তবায়িত হবে?
লক্ষ্যের প্রতি এই ৩ টি প্রশ্নের স্বচ্ছতা ভবিষ্যতে সেই লক্ষ্যের বাস্তবায়নেরই স্বচ্ছতার প্রতিফলক হবে।
যতটা পরিষ্কার হবে তোমার ধারণা তোমার লক্ষ্যের প্রতি, সেটার বাস্তবায়নের পথটা ততটাই তোমার
কাছে পরিষ্কার মনে হবে। পথটা কঠিন হলেও তুমি জানবে তুমি কোন দিকে যাচ্ছো, তুমি জানবে তোমাকে
কতটুকু পরিশ্রম দিতে হবে। জয়ী হওয়ার প্রথম শর্তটি তোমাকে এভাবেই বুঝে নিতে হবে।
২. ‘সৎসঙ্গ’-এর অভ্যাস গড়ে তুলুন:
সৎসঙ্গ হতে পারে কোনো বন্ধু, হতে পারে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, হতে পারে একজন মেনটর যার চিন্তাভাবনা,
মানসিকতা তোমার সাথে মিল খাবে, যার প্রেরণায় তুমি হবে উদ্বুদ্ধ। যে তোমাকে দিকনির্দেশনা দিতে
পারবে তোমার লক্ষ্যের দিকে, তোমার সাফল্যের পথে।
৩. নিজের ভিতর রপ্ত করে নাও ৩ টি ‘Keystone Habit’:
একটি নির্দিষ্ট অভ্যাস যা আমাদের মস্তিষ্ককে অন্যান্য ভালো অভ্যাসগুলো ক্রমান্বয়ে রপ্ত করে নিতে ও
সাফল্যের পথে পরিচালিত করে, সেগুলোই হলো ‘Keystone Habit’। ৩ টি অভ্যাস বরাবরভাবে এই
ক্যাটেগরিতে পড়ে।বই পড়ার মাধ্যমে জীবনের ছোট বড় বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়।
যোগব্যায়াম আমাদের মস্তিষ্কের ‘ইচ্ছাশক্তি’ নামক অংশকে এমনভাবে প্রভাবিত করে যে আমরা কোনো
একটি বিষয়ে খুব সহজেই মনোনিবেশ করতে পারি। সুষম আহার ও ব্যায়াম আমাদেরকে শারীরিকভাবে
সুস্থ রাখে এবং এ কথাটির কোনো বিকল্প নেই যে স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।। রপ্ত করা সময়সাপেক্ষ হলেও
এই অভ্যাসগুলো আমাদের শরীর ও মনকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেয় যে, আমরা যেকোনো চ্যালেঞ্জ সাদরে
গ্রহণ করতে পারি। আমরা কঠিন সময়গুলোকে সহজভাবে নিতে পারি এবং স্বাভাবিকভাবেই তখন
কোনো সমস্যা আদৌও সমস্যা মনে হয় না।
৪. নিয়ম করে ঘুম থেকে উঠুন এবং দিনের কার্যবিধি অগ্রিম লিখে রাখুন:
এই কথাগুলো কেউ শুনে নাই বিশেষ করে ‘ঘুম থেকে নিয়ম করে উঠা’ – এমন মানুষ খুব কমই আছে।
কিন্তু প্রয়োগ করার মতো মানুষের সংখ্যাটা কম। অথচ এই একটি অভ্যাস রপ্ত করলে দিনের সব কাজ
গুলো যেমন নিয়মমতো হয়ে যায় আবার পরবর্তী দিনের কাজগুলোর অগ্রিম প্রস্তুতিও নেওয়া যায় বটে।
পরবর্তী দিনের কার্যবিধি আগের দিন রাত্রে লিখে রাখলে কাজগুলো যেমন ঘুছিয়ে হয় তেমনি নিজের
মধ্যে কাজগুলোর জন্য একধরণের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কাজ করে।
৫. নিজের জন্য ‘Trigger Goal’ এবং ‘Improvement Goal’ নির্ধারণ করুন:
‘Trigger Goal’ বলতে মূলত বোঝায় একটি আগামীর বড় পরিবর্তনের জন্য আজকের ‘ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র
পরিবর্তন’, ভবিষৎতের বড় বড় প্রাপ্তির জন্য আজকের ‘ছোট ছোট কার্য সম্পাদন’। ‘Improvement
Goal‘ বলতে বুঝায় ‘একটি সংখ্যা সাথে একটি তারিখ‘-১ টি নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে নেওয়া ছোট ছোট
পদক্ষেপকে দিন ও সংখ্যায় মূল্যায়ণ। শুনতে বেশ কঠিন মনে হলেও আসলে বেশ সহজ। প্রথম দেখে
হালকা জটিল মনে হলেও আদৌও কিন্তু জটিল নয়। নিজের বড় লক্ষ্যের জন্য ছোট ছোট করে আজ
থেকেই কাজের প্রস্তুতি এবং তার ফলাফল দিন ও তারিখের সাহায্যে লিপিবন্ধকরণ। এই অভ্যাস তোমার
সামনে অতীত বর্তমান দুই অবস্থাই যেমন তুলে ধরবে, তোমাকে ভবিষতের জন্য কতটুকু পরিশ্রম দিতে
হবে সেটারও স্পষ্ট এবং প্রমাণিত দলিল দিবে।
৬. আচরণ এবং ব্যক্তিত্বে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে:
প্রথমত, ‘না’ বলতে শিখো।
সকলকে খুশি করা কখনোই সম্ভব না বরং এটি একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা মাত্র এবং নিজের সময়ের অপচয়।
দ্বিতীয়ত, ‘চেষ্টা করবো’- এই কথাটি জীবনের অভিধান থেকে মুছে ফেলো।
আমরা হয় একটি কাজ করি, না হয় করি না। ‘চেষ্টা করবো’ কথাটি না করার মধ্যেই থেকে যায়। তাই
এই কথাটাই আমাদের জীবনের অভিধান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
তৃতীয়ত, ‘পাবলিক স্পিকিং’ অভ্যাসটি রপ্ত করে ফেলো।
নিজের বক্তব্য, নিজের চিন্তাধারা এবং নিজের মতামত সকলের সামনে তুলে ধরার সাহস অর্জন করলে
জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বেশি দূরে নয়। আচরণ ও ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন আশেপাশের
পরিবেশের সাথে আমাদের মিশতে সাহায্য করে, মানুষকে চিনতে সাহায্য করে,দুনিয়াটাকে বুঝতে সাহায্য
করে।
৭. ‘সঠিক সময়’-এর অপেক্ষায় ছেড়ে দিতে হবে:
এই একটি কথা আমাদের জন্য এক ধাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, একটি প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে আমাদের
সফলতার পথে, কোনো এক নতুন পরিবর্তনের পথে। তাই আগামীর জন্য কিছু নয় বরং আজকের মধ্যে
ভাবতে হবে, নিজের ইচ্ছা, স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে।
প্রথমে আমরা আমাদের অভ্যাসের চয়ন করি এবং পরবর্তীতে সেই অভ্যাস আমাদের জীবনের ধারাকে
চয়ন করে। আমাদের আজকের অভ্যাস যদি হয় মদ্যপান আমাদের ভবিষৎ পরিচিতি হবে মদ্যপ বা
আলকোহলিক। আমাদের আজকের অভ্যাস যদি হয় কঠোর পরিশ্রম আমাদের ভবিষৎ পরিচিতি হবে
সফল ব্যক্তিত্ব।
৮. নিজের জন্য বাজেট তৈরী করতে হবে:
বাজেট তৈরী করার সহজ প্রাপ্তিটা হলো টাকা কোথায় যাচ্ছে এবং কিভাবে খরচ হচ্ছে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে
ও পরবর্তীতে অনর্থক কাজে অপব্যয় কমে যাবে। ভবিষতের উন্নতির জন্য এই অভ্যাসটি অনেক জরুরি।
একজন সফল ব্যবসায়ীক হোক কিংবা সদ্য চাকরিপ্রাপ্ত যুবক অথবা টিউশন করানো ছাত্রই বলো না
কেন, বাজেট তৈরী করার অভ্যাস তোমাকে যেমন বাঁচাবে অনর্থক খরচ থেকে তেমনি তোমাকে বানাবে
সকল কাজের নিয়ন্ত্রকও বটে।
পরিশেষে: লেখা গুলো পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদেরকে শেয়ার করতে ভুলবেন না ।
আপনার সুচিন্তিত মতামত আমার একান্ত কাম্য। তাই এই বিষয়ে আপনার যদি কোন মতামত থেকে
থাকে তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে জানাবেন। আমি আনন্দের সহিত আপনার মতামত গুলো
পর্যালোচনা করে রেপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করবো।
ভাল থাকবেন।