জীবনে চলার পথে প্রকৃত বন্ধু চিনে নেওয়ার ৭ টি উপায়

আমরা আমাদের ব্যস্ততম জীবনে হাজারো মানুষের ভিড়ে বন্ধু হিসেবে তাদেরকেই আপন করে নেই

যাদেরকে আমরা বিশ্বাস করতে পারি, যাদের সাথে সবকিছু ভাগাভাগি করে নিতে পারি, বিপদে যাদের

ঢাল হয়ে দাঁড়াই এবং প্রতিদান হিসেবে বিরূপ পরিস্থিতিতে তাদের কাছ থেকেও একই ব্যবহারটি আমরা

আশা করি।

কিন্তু বন্ধু প্রকৃত না হলে প্রতিদানটাও একই রকম হয় না। বাস্তবিকভাবে প্রকৃত বন্ধু পাওয়া বিরল হলেও

কিন্তু অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু তার থেকেও কঠিন বিষয় হলো, বন্ধুর মুখোশ পড়া মানুষগুলোর মধ্যে

থেকে প্রকৃত বন্ধুকে চিনে নেওয়া।

বাস্তব দুনিয়ায় কঠিন সময় না আসলে প্রকৃত বন্ধু চিনে নেওয়াটাও বড় কঠিন হয়ে পরে। তবে একজন

বন্ধুর ব্যক্তিত্ব, আচরণ, মানসিকতা এবং ব্যবহার অনেক কিছুর বয়ান দেয়। এই ব্যাপারগুলো অনেক

সুন্দর করেই ফুটিয়ে তোলে সে কি আসলেই একজন প্রকৃত বন্ধু নাকি সাধারণ মুখোশধারীর মধ্যেই

একজন।

প্রকৃত বন্ধু সেই হতে পারে যার মধ্যে এ গুনগুলো দেখা যায়:-

. যে বিপদের সময় সাহায্যের হাত নিয়ে আপনার পাশে এসে দাঁড়ায়:

বিপদ কখনো বলে আসে না। অথচ বিপদের সময় না বলা সত্ত্বেও কিন্তু প্রকৃত বন্ধু ঠিকই চলে আসে।

কথাটি কেউ জানে না, কখনো শুনে নাই, কথাটির অর্থ কেউ বুঝে না এমন মানুষ খুঁজে বের করা কঠিন।

অথচ এতকিছু জানার পরেও ঠিক একই ভাবে কিন্তু কঠিন প্রকৃত বন্ধু খুঁজে বের করা। নিতান্ত দুঃসময়

না আসলে, বিপদ জানান না দিলে, মুখোশধারী এই দুনিয়ায় প্রকৃত বন্ধুদের চিনে নেওয়াটা বড় কঠিন

হয়ে দাড়ায়।

 . যার সাথে ভালো মন্দ সবকিছুই ভাগাভাগি করে নিতে পারি:

 সমালোচনা, অবহেলা কিংবা দোষারোপের ভয়ে যখন আমরা আমাদের খারাপ খবরগুলো আমাদের

কাছের বন্ধুদেরই জানাতে ভয় পাই তখন এ ব্যাপারটুকু বুঝে নিতে হবে যে, কাছের বন্ধুগুলো কাছের বলে

মনে হলেও প্রকৃত নয়। শত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যখন জীবনের খুশির সংবাদগুলো, ছোট ছোট জয়গুলো

আমরা অকপটে আমাদের প্রিয় বন্ধুদের জানাতে পারি না, তখন বুঝে নিতে হবে যে, প্রিয় বন্ধুগুলো

হাজার প্রিয় মনে হলেও প্রকৃত কিন্তু না। যে বন্ধু আপনার খারাপ খবরকে বিন্দুমাত্র উপহাস না করে

আপনার মনকে হালকা করার চেষ্টা করে, আপনার পরিস্থিতি বোঝার হাজারো চেষ্টা করে, দিন শেষে

সেই কিন্তু আপনার প্রকৃত বন্ধু।

 . যে আমাদের ব্যক্তিত্বে আমাদের সর্বোচ্চটুকুকে ফুটিয়ে আনতে সাহায্য করে থাকে:

আমাদের আচরণ, ব্যবহার, আমাদের চিন্তাভাবনা, মানসিকতা সবকিছু গড়ে উঠে আমাদের চারপাশের

পরিবেশ থেকে, আমাদের আশেপাশের মানুষের থেকে। আর এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আমরা

সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হই আমাদের বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে। তাদের অভ্যাসগুলো, তাদের মানসিকতা

ধীরে ধীরে হোক কিংবা খুবই জলদি, আমাদের ব্যবহারেও চলে আসে। তাই আমরা যখন প্রকৃত বন্ধুর

সান্নিধ্যে থাকি আমরা আমাদের ব্যক্তিত্বের সর্বোচ্চটাকে আপন করে নেই। আর এটা বলারও অপেক্ষা রাখে

না যে, মুখোশধারী বন্ধুর সান্নিধ্যে আমরা আমাদের ব্যক্তিত্বের সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে যাই। বন্ধুর কথাই

বলে দেয় সে কতটুকু প্রকৃত আর কতটুকুই বা নয়। তার আচরণই বলে দেয় সে আপনার ব্যক্তিত্বের জন্য

কতটুকুই বা ভালো।

. আমাদের সাফল্যে যার চোখে ঈর্ষা নয়, থাকে গৌরবের প্রতিফলন হয়ে:

 আপনার জয়ে, আপনার ব্যর্থতায় আপনার প্রিয় বন্ধুটির প্রতিক্রিয়াই বলে দিবে, আপনার বন্ধুটি কি

প্রকৃত নাকি সেই একই মুখোশধারী মধ্যে একজন। একটা কথা বিবেচনায় রাখা খুবই দরকার, প্রকৃত বন্ধু

কখনোই আপনাকে প্রতিযোগী হিসেবে ভাবে না বরং ভাবে কঠিন রাস্তায় চলার সহযোগী হিসেবে। যে

বন্ধু আপনাকে প্রতিযোগী বলে বিবেচনায় রাখবে, আপনার সাফল্যে সে ঈর্ষান্বিত হবে, এটাই স্বাভাবিক।

যে বন্ধু আপনার সাথে ছোট ছোট বিষয় প্রতিযোগিতার মনোভাব রাখে, আপনার ক্ষুদ্র ব্যর্থতায় সে

আনন্দ পাবে, এটাই স্বাভাবিক। অথচ যে বন্ধু আপনাকে জীবনে চলার সহযোগী বলে বিবেচনায় রাখবে,

আপনার তুচ্ছ জয়েও সে গৌরব বোধ করবে। যে বন্ধু আপনাকে জীবনের কঠিন রাস্তার সঙ্গী হিসেবে

বিবেচনায় রাখে, আপনার বিরাট ব্যর্থতায় তার গৌরবের কমতি তো হয়ই না বরং সহযোগিতার হাতটা

বাড়িয়ে দেয়। এমন বন্ধুই আমাদের প্রকৃত বন্ধু হয় উঠে।

. যে আপনার কথা শুনতে চায় এবং শোনার আগ্রহ রাখে:

জীবনে কিছু কিছু কঠিন মুহূর্ত আসে, তখন মনে হয় কেউ যেনো পাশে থাকুক আমার কথাগুলো শুধু

শোনার জন্য, ভালো মন্দের বিচার না হয় পরেই হবে, ঠিক খারাপ না হয় পরেই ভাববো। কিন্তু এই

মুহূর্তের জন্য না হয়, শুধু এই মুহূর্তের জন্য বন্ধুটি যেনো আমার কথাগুলো শুনে, আমাকে বুঝে, আমাকে

যেনো প্রশ্ন না করে।

প্রকৃত বন্ধু থাকলে এই চাওয়াটা অত বেশি কিছু নয় কিন্তু মুখোশধারী হলে, নাম মাত্র বন্ধু হলে এই ছোট্ট

চাওয়াটাই কিন্তু পাপ।

 ৬. যে আমাদের জন্য সময় বের করে নিতে জানে:

 অদ্ভুত ব্যাপার হলেও সত্যি, সময় বের করে নেওয়ার সাথে ব্যস্ততার যতটা না সম্পর্ক আছে, তার

থেকেও অধিক গভীর সম্পর্ক আছে অগ্রাধিকারের, বন্ধুটির জীবনে আপনার গুরুত্বের, আপনার

অবস্থানের। প্রকৃত বন্ধুর কাছে আপনার গুরুত্ব আছে বলেই কিন্তু দেরি হোক তবুও সে আপনার জন্য

সময় বের করে নিবে। অগ্রাধিকার আছে বলেই কিন্তু প্রকৃত বন্ধুটির সময় আপনার কাছে অবশ্যই ধরা

দিবে। তার কাছ থেকে আপনি সময় পাবেন, কোনো অজুহাত নয়। 

. যার জন্য আপনার বোঝাপড়া হওয়াটা অতটা কঠিন কিছু নয়:

বোঝাপড়া হওয়াটা অতটা কঠিন কিছু নয়, শুধুমাত্র বিরল। অথচ প্রকৃত বন্ধুর ক্ষেত্রে বোঝাপড়াটা

বিরল নয়, কাকতালীয়। শুনতে বেশ জটিল মনে হলেও বিষয়টা বেশ সহজ। প্রকৃত বন্ধু হলে, সে

আপনাকে বুঝবে, আপনি তাকে বুঝবেন। তাকে আপনাকে কোনো কিছুর ব্যাখ্যা দিতে হবে না। সবাই

আপনাকে ভুল বুঝলেও সে বুঝবে আপনি কোন পরিস্থিতিতে ছিলেন, কেন এমনটি করেছেন কিংবা কেনই

বা এরকম পরিস্থিতি আসলো। আপনাকে সে দোষারোপ করবে না বরং বুঝিয়ে দিবে ভুলটা হচ্ছে

কোথায়। সে আপনার সমালোচনা করবে না বরং আপনাকে আপনার সঠিক রাস্তাটিই খালি দেখিয়ে

দিবে।

একজন প্রকৃত বন্ধু কঠিন বাস্তবিকতার এই দুনিয়াটাকে কিছুটা হলেও আমাদের জন্য সহজ করে দেয়।

প্রকৃত বন্ধু পাশে থাকলে প্রতিদিনের জীবনের রেষারেষি, কোলাহল, গেঞ্জাম, অশান্তি কিছুটা হলেও লাঘব

হয়। প্রকৃত বন্ধুর সঙ্গ থাকলে হাজার বিপদও কম মনে হয়। গভীর আলোচনা হোক কিংবা একেবারে

আজাইরা পেঁচাল, তা আমরা কেবল ঝাড়তে পারি প্রকৃত বন্ধুর কাছে। প্রকৃত বন্ধুর সাথে একটানা

শোরগোলও যেমন ক্লান্তিহীন, গভীর নিরবতাটাও কেমন জানি শান্তির। ভুলত্রুটিতে ভরা এই আমাদেরকে

আমাদের মতই গ্রহণ করে নেই একমাত্র সেই প্রকৃত বন্ধুই। এজন্যই বুঝি নিচের উক্তিটি এতটাই যথার্থ–

ভালো থাকবেন।।

Leave a Comment