এক সময় ছিলো চিঠিই যোগাযোগের উৎকৃষ্ট মাধ্যম। কিন্তু সময় আজ পাল্টে গেছে। চিঠির সেই যুগ
তআজ অনেকটাই অতীতের গল্পমত। বার্তা আদান-প্রদানের পদ্ধতিতে প্রযুক্তি তার ছোঁয়া লাগিয়ে
বর্তমানে এনেছে সাইবার চিঠির যুগ। যাকে আমরা ই-মেইল বলে থাকি। বর্তমানে ই-মেইল একটি অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে, তাদের প্রতিদিনই অসংখ্য চিঠি পাঠাতে বা রিসিভ
করতে হয়।বিভিন্ন সুবিধার কারণে ইমেইল ব্যবহারকারীদের কাছে খুব জনপ্রিয় একটি নাম হচ্ছে
জিমেইল। তবে জিমেইল ব্যবহার করলেও বেশীরভাগ ব্যবহারকারীরই এর বিভিন্ন ফিচার সম্পর্কে ধারণা
নেই। তাই লেখাটি পড়ে জেনে নাও, জিমেইল সম্পর্কিত তোমার জানা-অজানা বেশ কয়েকটি প্রয়োজনীয়
তথ্য।
১। জিমেইলে বড় আকারের ফাইল পাঠানো:
জিমেইল ২৫ মেগাবাইটের বড় মেইল পাঠাতে দেয় না। যেকোনো সংযুক্তিসহ পুরো মেইলটি যদি ২৫
মেগাবাইট অতিক্রম করে, তবে এটি আর পাঠানো সম্ভব হবে না। তবে এ ব্যাপারটি এড়ানোর বেশ
কয়েকটি পথ আছে। এক্ষেত্রে প্রথমেই তুমি যেটা করতে পারো তা হল, গুগলের ক্লাউড সেবা গুগল
ড্রাইভ-এ তোমার ফাইলটি আপলোড করে মেইলের মাধ্যমে তার লিংক শেয়ার করা। মূলত মেইল এর
মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানো প্রতিরোধ করতেই গুগলের এই নিয়ম।
৩। ছদ্মনামে একাধিক ই–মেইল খোলার জন্য:
তুমি যদি ই-মেইল অ্যাড্রেসে একাধিক ছদ্মনাম ব্যবহার করতে চাও, তবে ঠিকানার মাঝখানে একটা ডট
বসিয়ে দাও। এরপরও তোমার মেইল আসবে। যদি আরো ছদ্মনাম ব্যবহার করতে চাও, তবে প্রথম
অক্ষরের পর একটি ডট দিয়ে বাকিটুকু আগের মতো বসিয়ে দাও। এগুলো আপনি চাইলে বিভিন্ন
ওয়েবসাইটের সেবা গ্রহণ করার সময় বা নিউজলেটার সাবসক্রিপশন করার সময় ছদ্মনামে ই-মেইল
আইডি ব্যবহার করতে পারেন।
২। গুরুত্বপূর্ণ ইমেইল আলাদা করতে রঙিন স্টার:
গুরুত্বপূর্ণ ইমেইল আলাদা করতে জিমেইলে রয়েছে স্টার চিহ্ন ব্যবহারের সুযোগ। জিমেইলের ইনবক্সের
হোমপেজে প্রতিটি ইমেইলের পাশে একটি করে অনুজ্জ্বল স্টার চিহ্ন দেখা যায়। তুমি যদি কোনো মেইলকে
গুরুত্বপূর্ণের তালিকায় রাখতে চাও তবে সেই স্টারে ক্লিক করুন। সাদা রংয়ের স্টার তখন হলুদ রং
ধারণ করবে।
ঘুরে আসুন : কিভাবে জিমেইল এ্যাকাউন্ট খোলা যায়?
আপনি চাইলে হলুদ রংয়ের পরিবর্তে বিভিন্ন রংয়ের স্টার ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য প্রোফাইল
ছবির নিচে থাকা সেটিংস কমান্ড থেকে ইন-ইউস এবং নট ইন-ইউস থেকে রঙ বাছাই করতে পারবে।
এখান থেকে একটি, দুটি বা চারটি বিভিন্ন রংয়ের স্টার ব্যবহার করতে পারেন। প্রয়োজন অনুযায়ী
মেইলগুলো আলাদা রঙয়ের স্টার ব্যবহার করে রাখতে পারবেন। এতে করে আপনার ইমেইল বাচায়
করতে সুবিধা হবে ।
৪। করণীয় তালিকা যুক্ত করা :
আপনি করণীয় তালিকা যুক্ত করতে পারেন আপনার জিমেইলে।অফিস কিংবা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে
এফিচারটি ব্যবহার করা সম্ভব। আগামী দিনের সম্ভাব্য কাজের তালিকা ই-মেইলে যুক্ত করতে ও
সার্কেলের সদস্যদের কাছে পাঠানোর জন্য জিমেইলের হোম পেজে গুগল লোগোর নিচে জিমেইলে ক্লিক
করলে একটি পপআপ স্ক্রিন দেখা যাবে। সেখান থেকে টাস্ক নির্বাচন করো। এবার এতে যুক্ত করো দিনের
বা সপ্তাহের কাজের তালিকা। এ তালিকাটি সার্কেলে বা কাউকে মেইল করে পাঠাতে পারেন।
৫। কিবোর্ড শর্টকাট ব্যবহার:
জিমেইলে কিবোর্ডের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় শর্টকাট কি আছে। এতে মাউস ছাড়াই জিমেইল ব্যবহার করা
যাবে। এ রকম কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্টকাট কি হচ্ছে- মেসেজ পাঠাতে Ctrl+Enter, নতুন উইন্ডো চালু
করতে Ctrl+, কাউকে মেইল কার্বন কপি (সিসি) পাঠাতে Ctrl+Shift+c, কাউকে মেইল ব্লাইন্ড কার্বন
কপি (বিসিসি) পাঠাতে Ctrl+Shift+b। তবে মনে রাখবে, কম্পোজে ক্লিক করার পরই কেবল এই
শর্টকাটগুলো কাজ করবে। আপনি এভাবে কাজ করতে পারেন। তাতে আপনার সময় বাচবে।
৬। অ্যাডভান্সড শর্টকাট ব্যবহার:
ই-মেইল ব্যবহারকারীদের দরকারি প্রয়োজন মেটাতে রয়েছে অ্যাডভান্সড শর্টকাট মেন্যু। এটি চালু
করতে জিমেইলের ডান পাশে সেটিংসে গিয়ে কিবোর্ড শর্টকাট সক্রিয় করে দিবেন। কিবোর্ড শর্টকাট চালুর
পর আপনি সেবাগুলো পাবেন। নতুন মেসেজ লিখতে কিবোর্ডে ‘পি’ বাটন ক্লিক করুন। নতুন ট্যাবে
মেসেজ লিখতে কিবোর্ডে ‘এফ’ বাটন ক্লিক করুন। জিমেইলের সার্চ বক্সে কোন তথ্য খুঁজতে কিবোর্ডে ‘/’
বাটন ক্লিক করতে হবে। কোনো মেসেজের রিপ্লাই দিতে কিবোর্ডে ‘টি’ বাটন চাপতে হবে। চ্যাটিংয়ের তথ্য
মুছে ফেলতে কিবোর্ডে ‘#’ বাটন চাপলেই হয়।
৭। থার্ড পার্টি অ্যাপস এর ব্যবহার:
জিমেইলে গুগল অনুমোদিত বেশকিছু থার্ড পার্টি অ্যাপ আছে যেকোনো ডকুমেন্ট বা ছবি এডিট করার
জন্য। অন্যান্য জনপ্রিয় মেইল সার্ভিসের থেকে গুগল এদিকে বেশ এগিয়ে আছে। যেকোনো মেইলের সাথে
আসা ডকুমেন্ট বা ছবিতে ক্লিক করার পর উপরের দিকে তাকালেই ঐ ফাইলের সাথে ব্যবহারযোগ্য
বিভিন্ন অ্যাপের খোঁজ পেয়ে যাবে।
৮। একসাথে একাধিক জিমেইল অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করা যায়:
আপনি যদি দুইটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার চান,তবে একই ব্রাউজারে আপনি দুইটি ইমেইল চালু
করতে পারেন। একসঙ্গে দুইটি জিমেল অ্যাকাউন্ট সক্রিয় করতে জিমেইলের ওপরে ডান পাশে আপনার
ই-মেইল অ্যাড্রেসে ক্লিক করে Add Account নির্বাচন করুন। এতে নতুন একটি ট্যাব ওপেন হবে।
এবার এখানে আপনার অন্য জিমেইলের আইডি ও পাসওয়ার্ড বসিয়ে একসঙ্গে দুটি অ্যাকাউন্ট চালু করতে
পারেন।
৯। ধীরগতির ইন্টারনেট চালু করা নিয়ম:
ইন্টারনেট সংযোগ ধীরগতি হলে জিমেইল চালু হতে লম্বা সময় লাগতে পারে। এ সমস্যা সমাধানে আপনি
যদি switch to a basic version নির্বাচন করেন তবে দ্রুত পেজ আপলোড হবে। সার্চ বক্সে
https://mail.google.com/mail/?ui=htm লিখে সার্চ করলে বেসিক ভার্সনে জিমেইল দ্রুত
চালু হবে।
১০। মেসেজের লেবেলিং করা:
আপনার ইনবক্সে একইসাথে অনেক ধরনের মেইল আসতে পারে। সেক্ষেত্রে গুরুত্ব অনুযায়ী লেবেলিং করে
রাখলে আপনার জন্যে যেকোনো মেসেজের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে সহজ হবে। আপনি জিমেইল এর মেইন
উইন্ডোতে গিয়ে লেবেলিং করতে পারবেন। ওখানে থাকা অপশনগুলো ছাড়াও আপনি নিজের ইচ্ছা মত
লেবেল বানিয়ে নিতে পারবে।আরো বেশ কিছু জি-মেইলের ব্যবহারের বিষয় আছে তার সর্ম্পকে
সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
ইমেইল আপনার তথ্যকে নিরাপদ ও গোপনীয় রেখে থাকে ।যদি আপনি Gmail ব্যবহার করেন, তাহলে
আপনার অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখা নিশ্চিত করতে আপনি এই পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে পারেন৷
আপনার না চাওয়া পর্যন্ত ইমেল ফরোয়ার্ড অথবা ভাগ করা হয় না, তা নিশ্চিত করুন
ফরোয়ার্ড করার জন্য “মেল সেটিংস” ট্যাবটি পরীক্ষা করুন এবং ডেলিগেশন সেটিংস যা আপনার ইমেল
সঠিকভাবে নির্দেশিত হয়েছে তা নিশ্চিত করতে আপনার অ্যাকাউন্টে অন্য অ্যাক্সেস অনুমোদন করে৷
যদি আপনি আপনার পাসওয়ার্ড ভুলে যান, তাহলে অ্যাকাউন্টে ফিরে যেতে একটি উপায় দরকার৷
যদি আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার প্রয়োজন হয়, তাহলে Google পুনরুদ্ধারের ইমেল
ঠিকানাটিতে একটি ইমেল পাঠাতে পারেন, সুতারং আপনার পুনরুদ্ধার ইমেল ঠিকানাটি আপ-টু-ডেট
এবং আপনি অ্যাক্সেস করতে পারেন তা নিশ্চিত করুন৷ এছাড়াও পাঠ্য বার্তা মারফত আপনার
পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি কোড পেতে, Gmail প্রোফাইলে একটি ফোন নম্বর জুড়তে
পারেন৷
আপনার অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে, আপনার অ্যাকাউন্টে একটি মোবাইল নম্বর থাকা হল অন্যতম
সহজ এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায়৷ উদাহরণস্বরুপ, যদি কেউ আপনার অ্যাকাউন্ট ভাঙার চেষ্টা
করে, তাহলে সেই লোকেদের চ্যালেঞ্জ করতে Google ফোন নম্বরটি ব্যবহার করে এবং একটি
যাচাইকরণ কোড পাঠায়, যাতে আপনি কখনও অ্যাক্সেস হারালে সেটি ব্যবহার করতে পারেন৷ Google
এ একটি পুনরুদ্ধার ফোন নম্বর দেওযার ফলাফল হিসেবে, বিপণন তালিকাগুলির জন্য সাইন আপ করা
নয় অথবা টেলিবিপণনকারীদের থেকে কল আসে না৷
পুনরুদ্ধার ইমেল ঠিকানা অথবা একটি নিরাপত্তা প্রশ্নের তুলনায় আপনার মোবাইল ফোন আরো সুরক্ষিত
সনাক্তকরণ পদ্ধতি কারণ, অন্যদুটি ছাড়া, আপনার মোবাইল ফোনই শারীরিক অধিকৃত বস্তু৷
অস্বাভাবিক অ্যাক্সেস অথবা কার্যকলাপের জন্য আপনার অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করুন
অপরিচিত অথবা সন্দেহজনক কার্যকলাপের জন্য নিয়মিতভাবে আপনার অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা
করুন৷ আপনার মেল ঠিকানা থেকে অ্যাক্সেস করা সাম্প্রতিক IP ঠিকানা এবং তাদের সংযুক্ত
অবস্থানগুলি, খুঁজে পেতে পৃষ্ঠার খুব নীচে থাকা “বিবরণ” লিঙ্কটি ক্লিক করুন৷ যদি আপনি অ্যাকাউন্টে
সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখতে পান, তাহলে অবিলম্বে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন এবং অ্যাকাউন্ট থেকে লগ
আউট করুন৷
সন্দেহজনক অ্যাকাউন্ট কার্যকলাপ সম্পর্কে আরো তথ্য দেখুন৷
নয়) দিয়ে শুরু হচ্ছে কিনা তা আপনার পরীক্ষা করা উচিত৷ এটি সংকেত দেয় যে, ওয়েবসাইটে আপনার
যখন আপনি Gmail এ সাইন ইন করছেন, তখন ওয়েব ঠিকানা https:// (শুধুমাত্র “http://” দিয়ে
সংযোগ এনক্রিপ্ট করা এবং গোপনে ভেদ এবং অবৈধ প্রভার বিস্তার প্রতিরোধী৷
ইমেইল এর ক্ষেত্রে সিসি এবং বিসিসি মানে কী
সি সি (CC) অর্থাৎ কার্বন কপি, একাধিক মেইল পাঠাতে এই বক্স ব্যবহার করা হয়। বি সি সি (BCC)
অর্থাৎ ব্লিন্ড কার্বন কপি, একই বার্ত কারা পেয়েছে, তা যদি মূল গ্রাহককে পাঠাতে না চাইলে এই বক্স
ব্যবহার করা হয়।
Gmail আর Email এর মধ্যে পার্থক্য কি?
এখানে জিমেইল হলো এক ধরণের ইমেইল সেবা। অর্থাৎ গুগল GMail দ্বারা আপনাকে ইমেইল পাঠানোর
সার্ভিস প্রদান করছে। পার্থক্য বলতে কিছু নেই, জিমেইল মানেই ইমেইল। পূর্ণরূপ একটার দাঁড়ায়
Google Mail আরেকটার Electronic Mail.ইয়াহু, আউটলুক, হটমেইল ইত্যাদি ইমেইল সার্ভিসের
মত জিমেইলও একটি ইমেইল সার্ভিস।
তাহলে বন্ধুরা এবার বুঝতে পেরেছেন জিমেইলে কি কি ধরনের কাজ হয় এবং আপনি তা কিভাবে
পরিচালনা করবেন । আপনার যদি জিমেইল এ্যাকাউন্ট থাকে তবে এ বিষয়গুলো জানা খুব দরকার।
কারন এখন প্রায় জায়গায় ইমেইলের ব্যবহার হচ্ছে। তো বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করলাম। কাল আবার
দেখা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে ততোক্ষনে ভাল থাকবেন।।