ইন্টারনেটের মাধ্যমে পুরো পৃথিবী এখন আমাদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে । এর কারন হচ্ছে পৃথিবীর
যে কোন প্রান্তে যা কিছু ঘটুক না কেন তা এখন খুব সহজে ঘরে বসে আমরা কম্পিউটারের মাধ্যমে
ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখতে ও শুনতে পারি।
ইন্টারনেটের অবদান:
যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়ে গিয়েছে তার অবদান হলো ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের পাশাপাশি বিভিন্ন সার্চ
ইন্জিন যেমন গুগল, ইয়াহু, বিং এর মত বড় বড় সার্চ ইন্জিনের ভুমিকাও অতুলনীয়।আমরা এখন কত
সহজে গুগলে ব্রাউজ করে কিবোর্ড থেকে দুই একটি বাটন চাপ দিলে সাথে সাথে পুরো পৃথিবীর সমস্ত
ওয়েবসাইট গুলো আমাদের সামনে হাজির হয়ে যায় কোন ওয়েবসাইটে কি তথ্য রয়েছে সে বিষয়
নিয়ে।এই গুগলের মত সার্চ ইন্জিনগুলো না থাকলে এত সহজে কিন্তু আমাদের পক্ষে সেই ওয়েবসাইট
গুলো খুজে পাওয়া সম্ভব হত না ।পৃথিবীতে প্রায় ২.5 কোটির ও ওপরে ওয়েবসাইট রয়েছে । তার মধ্যে
থেকে বেছে বেছে গুগল আমাদের সার্চ কিওয়ার্ড রিলেটেড ওয়েবসাইট গুলো আমাদের সামনে এনে দেয়।
সেটা আপনি চাচ্ছেন।এই 2.5 কোটি ওয়েবসাইটের মধ্য থেকে কোনো ওয়েবসাইটকে গুগল তার সার্চ
রির্সাচে এক নম্বরে রাখে, কোনোটিকে আবার রাখে দুই নম্বরে, এভাবে পর পর রেখে থাকে।
আরো জানুন:
এর কারন ওয়েবসাইটে সেই তথ্য রিলেডেট ইনফরমেশন রয়েছে সব গুলো পর্যায়ক্রমে একজন ইউজারের
কাছে তুলে ধরে। কিন্তু চিন্তা করে দেখেছেন যে এত গুলো ওয়েবসাইটের মধ্যে কেন এ ওয়েবসাইটটিকে
এক নম্বররে দিলো । অন্য গুলোকেও তো দিতে পারত? এর প্রধান কারণ হলো গুগল এসব ওয়েবসাইট
গুলোকেই সবার প্রথমে রাখে, কারন ইউজার যা জানতে চান তার সঠিক তথ্য ও তার ব্যবহার সর্ম্পকে
সকল বিষয় আলোচনা করা থাকে সেই সাইটে।আর তাই কেউ যদি তার ওয়েবসাইটকে গুগলে সার্চ
রেজাল্টে সবার প্রথমে দেখতে চান তাহলে তাকে অবশ্যই যে কোন একটি বিষয়ে সঠিক তথ্য ও সকল
কিছু দিয়ে এবং খুব ভালোভাবে উপস্থাপন করতে হবে। যাতে খুব সহজেই একজন ইউজার আপনার
ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে সেই বিষয়টি পড়ে ও দেখে তার ব্যাপারটার সম্পর্কে পরিপূর্ণ জানতে পারেন।
আরো জানুন: SEO কি এবং এর কাজ কি?
কিন্তু অনেক সময় খুব ভালো আটির্কেল আমাদের ওয়েব সাইটে পাবলিশ করেও গুগলে প্রথম পেজে
আসতে পারি না । এমন অনেকেইে আছেন যারা খুব ভালো ভালো ইনফরমেশন দিয়ে ও গুগলে প্রথম
পেজে আসতে পারে না।ঠিক এরকম যারা যারা আছেন তাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে গুগল কি কি
কারণে একটি সাইট বা একটি আটির্কেলকে গুগলের সার্চ রেজাল্টে সবার প্রথমে রাখে।একটি
ওয়েবসাইটকে গুগল প্রায় ২০০ভাবে এবং ২০০টির ও ওপরে দিক দেখে তারপরে একটি ওয়েবসাইটকে
প্রথম পেজে জায়গা দিয়ে থাকে। যা কোনটিই গুগল পাবলিশ করে না। এটা গুগলের একটি গোপন
দিক।এর কারন বের করার জন্য অনেক এক্সপ্রার্ট লোক অনেকদিন যাবত বিভিন্ন এক্সপ্রেরিমেন্টের
মাধ্যমে কিছু দিক বের করতে করেছেন। এবং তারা তা নিজ সাইটে ব্যবহার করে গুগলের প্রথম পেজে
আসতে সক্ষম হয়েছেন। আজ আমি কিছু বিষয় আলোচনা করবো যেন আপনিও গুগলের প্রথম পেজে
আসতে পারেন।
ওয়েবসাইটকে গুগলের প্রথম পেজে নিয়ে আসার কিছু উপায় :
কন্টেন্ট লেখা :
আপনার সাইট গুগলে র্যাংকিং করার প্রথম এবং প্রধান শর্তই হলো আপনার কন্টেন্ট। কন্টেন্ট বিভিন্ন
রকম হতে পারে যেমন অডিও ভিডিও ইমেজ প্যারাগ্রাফ ইত্যাদি। আবার এই সবগুলো সমন্নয়েও কন্টেন্ট
হতে পারে। আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট যাই হউক না কেন তা অবশ্যই ভালো কোয়ালিটি সম্পন্ন
কন্টেন্ট হতে হবে। তা না হলে আপনি যাই করেন না কেন আপনার সাইট গুগলে র্যাংকিং বা প্রথমে পেজে
নিয়ে আসতে পারবেন না। গুগলে প্রথম পেজে নিয়ে আসার জন্য আপনার ওয়েবসাইটের অভ্যন্তরিন বা
অনপেজে কিছু ফ্যাক্টর ।
টাইটেলে ফোকাস কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন:
আপনার যে কন্টেন্ট বা আটির্কেল রয়েছে সেই আটির্কেলের টাইটেলে আপনার প্রধান টার্গেট কিওয়ার্ড
ব্যবহার করুন। এটা খুবই জরুরী গুগল আপনার কন্টেন্টে সবার প্রথমেই টাইটেলকে তাদের সার্চ
রেজাল্টে নিয়ে আসে তাই আপনার ফোকাস কিওয়ার্ডটি আপনার টাইটেলে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মেটা ডিসক্রিপশন দেন:
গুগলে কেউ সার্চ করলে তার সামনে কিন্তু সবার প্রথমে সব সাইটের পুরো কন্টেন্টটি নিয়ে আসে না গুগল
শুধু সেই কন্টেন্ট এর টাইটেল ও মেটা ডিশক্রিপশন তাদের সার্চ রেজাল্টে দেখায়। তাই আপনার কন্টেন্ট
এর টাইটেল ও মেটা ডিসক্রিপশন আকর্ষণীয় না হলে কিন্তু আপনার সাইটে কেউ ঢুকবে না। এতে
আপনার সাইট গুগলের প্রথমে আসলে ও তেমন লাভ হবে না, যদি না কেউ আপনার সাইটে ভিজিট করে।
কন্টেন্টে বিভিন্ন হেডিং ব্যবহার করুন:
আমরা হয়ত সকলেই জানি যে ওয়েবসাইটে মোট ৬টি হেডিং ব্যবহার করা যায়। যেমন: H1, H2,
H3, H4, H5, H6 আপনার আটির্কেলে এই হেডিং গুলো প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার
করুন। প্রতিটি হেডিং এ কিওয়ার্ড রাখতে পারলে সবচেয়ে ভালো তবে অপ্রয়োজনে ব্যবহার করবেন না ।
এতে আপনার আটির্কেলের কোয়ালিটি হ্রাস পাবে।
কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন :
আপনি যদি একটি আটির্কেল লিখেন তাহলে সেই আটির্কেলে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন জায়গায় আপনার
প্রধান কিওয়ার্ডটি ব্যবহার করুন। সব জায়গায় সম্ভব না হলে প্রধান বা মূল প্রবন্ধে অবশ্যই কিওয়ার্ড
ব্যবহার করুন।
সঠিক কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন:
আপনার ওয়েবসাইটে বেশি বেশি ভিজিটর পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই সঠিক কিওয়ার্ড ব্যবহার
করতে হবে। কারণ আপনি যদি এমন কিওয়ার্ড নিলেন যে কিওয়ার্ডে কষ্ট করে আপনার সাইট গুগলে
প্রথম পেজে নিয়েও আসলেন তবে সেই কিওয়ার্ডটি দিয়ে কেউ সার্চই করে না তাহলে কিন্তু সেই প্রথমে এসে
আপনার কোন লাভই হবে না। তাই এমন কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন যা সবাই কম বেশি সার্চ করে। এর
জন্য গুগল কিওয়ার্ড প্লেনারের হেল্প নিতে পারেন।
আটির্কেল বড় করুন:
একটা সময় ছিল যখন মাত্র ১০০-৩০০ ওয়ার্ড লিখেই মানুষ তাদের সাইট গুগলে প্রথমে পেজে প্রথম
নম্বরে নিয়ে আসতে পারত । কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ব্যাপারটা আসতে আসতে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এখন
আর ১০০-৫০০ ওয়ার্ড লিখে কখনই আপনি গুগলে র্যাংকিং এ আসতে পারবেন না। তাই আপনাকে কম
করে ১০০০ওয়ার্ডের উপরে আটির্কেল লিখতে হবে। পারলে আরো বেশি যেমন ২০০০- ৫০০০পর্যন্ত হলে
আপনি খুব সহজেই গুগল র্যাংকিং এ আসতে পারবেন।
কপি করা বাদ দিন:
অনেকে আছে যারা অন্যের লেখা কপি করে তাদের সাইটে পাবলিশ করে ফলে তারা হাজার চেষ্টা করেও
গুগলে র্যাংকিং এ আসতে পারে না। এর প্রধান কারণ হলো গুগল কখনোই কপি পছন্দ করে না তাই
কোনভাবেই কারো কন্টেন্ট কপি করবেন না।
ইমেজ অবটিমাইজেশন :
আপনার লেখা আটির্কেল গুগলে র্যাংক করাতে হলে সেই আটির্কেলে ইমেজ ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরী।
সেই সাথে জরুরী ইমেজ অবটিমাইজেশ করা । ইমেজ অবটিমাইজেশন বলতে ইমেজ সাইজ ছোট করা
ইমেজে ALT ট্যাগ ব্যবহার করা ।
ইন্টারনাল লিংক ব্যবহার করুন:
আপনার লেখার ভিতর প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন আটির্কেলের লিংক এড করে দিন এতে আপনার
সাইটে বাউন্স রেট অনেক কমে যাবে তখন আপনার আটির্কেল গুলো শক্তি ও অনেক বাড়বে ফলে
আপনার আটির্কেল গুলো সহজেই র্যাংকিং এ আসতে পারবে।
ইউআরএল এ কিওয়ার্ড যুক্ত করে দিন:
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আপনি যে আটির্কেলটি গুগলে র্যাংকিং করাতে চাচ্ছেন সেই আটির্কেলের
ইউআরএলে অবশ্যই আপনার প্রধান কিওয়ার্ডটি যোগ করে দিন।
সার্চ ইন্জিন ওয়েবমাস্টার ভেরিফিকেশন :
আপনার ওয়েবসাইটিকে বিভিন্ন সার্চ ইন্জিন ওয়েবমাস্টারে ভেরিফিকেশন করুন । যা আপনার সাইটকে সবার আগে সার্চ ইন্জিনে ইনডেক্স হতে সাহায্য করবে।
আপনার ওয়েবসাইটের সাইটম্যাপ গুগলে ইনডেক্স করুন:
গুগলে র্যাংকিং এর জন্য সাইটম্যাপ খুবই জরুরী। কারণ সাইটম্যাপ আপনার সাইটের কোথায় কি আছে
কয়টা পেজ কয়টা পোস্ট ইত্যাদি সার্চ ইন্জিনে ইনডেক্স করে দেয়।
আপানার সাইটকে রেসপনসিপ বা মোবাইল বান্ধব ভাবে ডিজাইন করুন:
একটা সময় ছিল যখন শুধু মাত্র কম্পিউটার ইউজাররাই ইন্টারনেট ব্যবহার করত কিন্তু বর্তমানে
সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হলো মোবাইল ইউজার। শতকরা প্রায় ৮০-৯০% লোক মোবাইল
দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তাই আপনার সাইটকে অবশ্যই রেসপনসিপ ডিজাইন করুন যাতে
মোবাইল ইউজারা ও খুব সহজে আপনার সাইট ব্রাউজ করতে পারে।
গুগলে প্রথম পেজে নিয়ে আসার জন্য আপনার ওয়েবসাইটের বাহ্যিক বা অফপেজে কিছু ফ্যাক্টর
ব্যাকলিংক তৈরি করুন:
আপনার ওয়েবসাইটের লিংক অন্য কোন ওয়েবসাইটে দেওয়াকে ব্যাকলিংক বলে। আপনার
ওয়েবসাইটের লিংক যত বেশি ওয়েবসাইটে থাকবে এবং যত বড় বড় বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটে থাকবে তত
বেশি আপনার ওয়েবসাইট গুগলের কাছে প্রধান্য পাবে এবং তত সহজে আপনার সাইট গুগলের প্রথম
পেজে আসতে পারবে।
আপনার সাইটের DA/PA বাড়ান:
DA অর্থাৎ ডোমেন অথোরিটি এবং PA অর্থাৎ পেজ অথোরিটি। আপনার সাইটের ডোমেন গুগলের
কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনার ডোমেনটি থেকে গুগলে আসলে যা যা প্রত্যাশা করে তার কত টুকু
আপনার ডোমেন গুগলকে দিতে পারে তার একটা শতকরা হিসাব হচ্ছে ডোমেন অথোরিটি বা DA । PA
টাও একই শুধু এটা হচ্ছে আপনার সাইটের পেজের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে। আপনার সাইটের DA/PA যত
বেশি হবে তার মানে আপনার সাইট গুগলের প্রত্যাশা তত বেশি পূরণ করতে পারেছে । তাই গুগলে প্রথম
পেজে আসতে হলে আপনাকে অবশ্যই আপনার সাইটের DA/PA এর উপর নজর দিতে হবে।
প্রাসঙ্গিক লিংক :
আপনার ওয়েবসাইটি যে রিলেটেডে আপনি সেই রিলেটেড ওয়েবসাইটে আপনার সাইটের লিংক তৈরি
করুন। এতে আপনার সাইটে সেই লিংক থেকে যেমন ভিজিটর প্রবেশ করবে ঠিক তেমনি গুগলও এটাকে
খুব প্রজেটিভ নিবে।
ডু-ফলো নো-ফলো লিংক:
লিংক বিল্ডিং এর সময় আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে আপনি শুধু ডু-ফলো লিংকই যেনো না
বিল্ড করেন অবশ্যই আপনকে কোয়ালিটি সম্পন্ন ডু-ফলো লিংকের পাশাপাশি নো-ফলো লিংক ও বিল্ড
করতে হবে।
ডোমেনের বয়স:
গুগলে র্যাংকি কিংবা গুগলের প্রথম পেজে আপনার সাইট আনতে গেলে আপনার ডোমেন পুরুনো হওয়া
অত্যন্ত জরুরী। ধরুন দুটি ওয়েবসাইট একই নিশ রিলেটেড, একটির ডোমেনের বয়স ৫বছর আর
একটির বয়স ২বছর । এখানে কিন্তু ২বছর বয়সী ডোমেনটির চেয়ে ৫বছর বয়সি গুগলে আগে র্যাংকিং
পাবে। কারণ সে ৫বছর ধরে গুগলের বিস্ততা অর্জন করেছে যা দুই বছরের টা করতে সক্ষম হয়নি।
স্পেম স্কোর কম করা :
আপনার সাইটের যদি স্পেমস্কোর অনেক বেড়ে যায় তাহলে কিন্তু আপনার র্যাংকিং এ আসা অনেক
কষ্টকর ব্যাপার । তাই অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যাতে আপনার সাইটের স্পেম স্কোর না বাড়ে এবং
আজেবাজে ব্যাকলিংক যাতে কেউ না তৈরি করতে পারে।
এই ব্যাপার গুলো খেয়াল করে যদি আপনি কাজ করে যেতে পারেন তাহলে আমি আশা করি খুব শীঘ্রই
আপনার ওয়েবসাইট গুগলে প্রথম পেজে আসবে । তবে অবশ্যেই আপনাকে নিয়মিত ভালো ভালো কন্টেন্ট
দিয়ে যেতে হবে এবং ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে তাহলেই কেবল সফলতা অর্জন সম্ভব।