কীভাবে একটি ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করবেন?

আপনি যদি  ই-কমার্স ব্যবসা করতে চান তাহলে শুরু করার জন্য সর্বপ্রথম আপনার একটি ওয়েবসাইট

থাকা প্রয়োজনীয়। আর আপনার ওয়েবসাইটের ডিজাইনই আপনার ভার্চুয়াল স্টোর কতটা সফল কিংবা

বিফলেযাবে সেটা নির্ধারণ করে। ডিজাইন বলতে আপনার সাইট দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হতে হবে

এমনটাবুঝায়নি; আপনার সাইট ইউজার বন্ধুত্বপূর্ণ হতে হবে যাতে সহজেই কেউ তার পছন্দের পণ্যটি

খুঁজে পেতে পারে, আপনার সাইটটি বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে, সাইটটি দিনে ২৪ ঘণ্টা এবং সপ্তাহে ৭ দিন

অ্যাক্সেসেবল হতে হবে এবং দ্রুত পেজ লোড হতে হবে।  অনলাইন পেমেন্ট গ্রহন করার জন্য নিজস্ব

লেনদেন সিস্টেম উন্নতি করতে হবে পেপাল বা অন্যান্য পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস ব্যবহার করে লেনদেন

নিশ্চিত করতে পারেন।

আরো জানুন:

কিছু সময় পণ্য ক্রেতা পর্যন্ত না পৌছতেই ভেঙ্গে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়, সেগুলো রিফান্ড বা ফেরত

নেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। কাস্টমারের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে বা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে

কাস্টমার সাপোর্ট ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। অনলাইনেও আপনি কাস্টমার সাপোর্ট দিতে পারেন আপনার

একটি কল সেন্টার স্থাপন করেও কাস্টমার সাপোর্ট দেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া সততা এবং নিষ্ঠার

সাহায্যে ব্যবসা করে কাস্টমারের সাথে একটি বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক স্থাপন করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

বাংলাদেশে কমার্সের ব্যবসা:

বিশ শতকের শেষ ভাগে উন্নত দেশগুলোতে ডিজিটাল বিপ্লব শুরু হলেও একুশ শতকে এসে তা

উন্নয়নশীলঅধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তির বিস্ময়কর এই সম্প্রসারণ বিশ্বে

ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আধুনিকতা ও নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছে – যা ই-কমার্স নামে সমধিক পরিচিত।

বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তির

সুবিধা শহর ও গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ায় ই-কমার্স সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে বেশ

কয়েকটি ই-কমার্স সাইটে অনলাইনে কেনাকাটার বিষয়টি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তৃণমূলের মানুষও ধীরে

ধীরে এতে সম্পৃক্ত হতে শুরু করছে। এ অংশে বাংলাদেশে ই-কমার্সের কিছু জনপ্রিয় সাইট উল্লেখ করা

হলো:

রকমারি.কম,ক্লিকবিডি,বিক্রয়.কম,এখনি.কম,হটঅফারবিডি.কম,প্রিয়শপ.কম,উপহারবিডি,ই-

বে,আমাজন,ইজিটিকেট,আইটিবাজার২৪ উন্নততর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আলিবাবা ডটকম নামের

সাইটটি সারা পৃথিবীতে সেবা দিয়ে চলেছে। সেদিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয় যেদিন আমাদের যেকোনো

পণ্যও ই-কমার্সের কল্যাণে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের ক্রেতাই ঘরে বসে অর্ডার দিতে পারবেন। দ্রুত

সময়ের মধ্যেই সেই পণ্য পৌঁছে যাবে ক্রেতার ঠিকানায়; লেনদেনেও থাকবে না কোনো অনিয়ম বা

ভোগান্তি।

কমার্স ব্যবসা শুরু করার আগে করণীয় কাজ:

ই-কমার্স ব্যবসা করতে হলে আপনাকে তেমন বেশি কষ্ট করতে হবে না । ই-কমার্স ব্যবসাটি সরাসরি

তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে  সম্পৃক্ত। আমাদের দেশে এর সম্ভাবনা অনেক। ই-কমার্সের সুবিধা হলো এখানে পুঁজি

লাগে কম। শুধু আপনার ইচ্ছাশক্তি, সৃজনশীলতা ও পরিশ্রমই ই-কমার্স ব্যবসার সবচেয়ে বড় পুঁজি। এই

ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনেক মাধ্যমের প্রয়োজন হয়। ব্যবসায়ী, খুচরা বিক্রেতা, সেবাদাতা, ব্যাংক,

নীতি নির্ধারক, থার্ড পেমেন্ট প্রসেসর এবং সর্বোপরি, ক্রেতা বা ভোক্তাদের ই-কমার্সের মাধ্যম হিসেবে

গণ্য করা হয়। এসব মাধ্যমকে এক প্ল্যাটফর্মে এনে আর্থিক লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনাই হচ্ছে ই-কমার্স।

এই ব্যবসা চালুর জন্য গ্রাউন্ড ওয়ার্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে ব্যবসায়িক মডেলসহ ব্যবসা পরিচালনার

একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। আসুন ই-কমার্স ব্যবসা করতে কি কি কাজ করতে হবে তার বিষয়ে

ধারা বাহিক ভাবে আলোচনা করছি:

ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করার কৌশলগত বিষয়সমূহ:

.  ই-কমার্স ব্যবসা করতে হলে প্রথমে আপনাকে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে।

আরো জানুন: ই-কমার্স সাইটের জন্য সেরা ডোমেইন হোস্টিং কিনবেন কিভাবে?

২.ই-কমার্স সাইটটিকে ওয়েবসাইট অনুসন্ধানের প্রথম দিকে নিয়ে আসার জন্য এসইও সম্পর্কে ধারণা

থাকা প্রয়োজন। কারণ, সাইটটিতে যতো বেশি ভিজিটর বাড়ানো যাবে ততো বেশি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়

বাড়ানো সম্ভব হবে।

.:ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনা করা জন্য বিভিন্ন পণ্যের গুনগত মানের উপর কন্টেন্ট লিখতে হবে এবং

প্রোডাক্ট বা কনটেন্ট মার্কেটিং করতে হবে।

. ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং পণ্য বিক্রি করতে হবে।

. ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনা করা জন্যে এবং ব্যবসার প্রসার বাড়ানোর জন্য প্রচার মাধ্যমের

সহায়তা করতে হবে ।

৬. ই-কমার্স ব্যবসার পন্য প্রচার প্রচারনার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতে হবে।যেন মানুষ পন্যটি

সর্ম্পকে জানতে পারে।

৭. ছবি তোলা অডিওভিডিও এবং তা আপলোড করার দক্ষতা থাকতে হবে।

৮. পণ্যটি সম্পর্কে লেখা আকর্ষণীয় শিরোনাম তৈরির দক্ষতা থাকতে হবে।

৯. প্রোডাক্ট বা কনটেন্ট এর চাহিদা নিরূপণের জন্য গবেষণা বা সার্ভে করতে হবে।

১০. পেমেন্ট গেটওয়ে হিসেবে ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা ভালো থাকতে হবে।

১১. পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা ভালো হতে হবে যেন সময় মতো পন্য গ্রাহকের নিকট দেওয়া যেতে পারে।

১২. ভোক্তার সঙ্গে অটোমেইলে কানেক্টিভিটি থাকতে হবে।

কমার্স পরিচালনার জন্য বিপণন পরিকল্পনা

ই-কমার্স পরিচালনায় পণ্য সামগ্রী ক্রয় ও বিক্রয়ের জন্য একটি বিপণন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

কারণ, পণ্যের বিপণন কৌশলের ওপর ই-কমার্সের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভরশীল। বিপণন পরিকল্পনা

বিভিন্নভাবে করা যেতে পারে:

১. গ্রাহক নিবন্ধন;

২. পণ্য উৎপাদনকারী নিবন্ধন;

৩. ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতাদের নিবন্ধন;

৪. ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন;

৫. স্বেচ্ছাসেবক টিম তৈরি;

৬. বিপণন টিম গঠন।

শেষ কথা,

আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি যারা নতুন ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন তাদের অনেক

উপকারে আসবে, পাশাপাশি এই সিস্টেম কীভাবে কাজ করে সেটা সম্পর্কেও আপনি বিস্তারিত জানলেন।

অনলাইন থেকে কেনা বেচার অসংখ্য সুবিধার মাঝে কিছু অসুবিধাও রয়েছে, যেমন- পছন্দের পণ্য খুঁজে

পেতে দেরি হতে পারে, দাম অঝথা বেশি হতে পারে, নতুন সাইট গুলোর উপর সহজে বিশ্বাস করা যায় না

এবং অনলাইন কেনাকাটার জনপ্রিয়তার ফলে অফলাইন বা লোকাল মার্কেটের ব্যবসা কমে যাচ্ছে।

Leave a Comment