আমরা প্রত্যেকই সৃষ্টিকর্তার বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এ পৃথিবীতে এসেছি যদিও সেই নির্দিষ্ট
সময়টুকু আমাদের অজানা। আমরা সবাই জানি- ” Man is mortal” অতঃএব আমাদের প্রত্যেকের
জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত মধ্যকার সময়ের প্রতিটি সেকেন্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা কি আদৌ সেই
সময়টাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছি? সিংহভাগ ব্যক্তিরই উত্তর হবে- “না”। আর এই উত্তর “না”
আরো জানুন: 10 টি জিনিস আপনি কিনতে পারবেন না।
হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান হলো অপরিকল্পিত জীবন ব্যবস্থার। আমরা সবাই জীবনে সফল
হতে চাই কিন্তু সফলতা পেতে হলে যা করণীয় তা করি না। বিশেষ করে আমরা আমাদের জীবন ব্যবস্থার
প্রতিটি পদে পদে সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে পারি না। অথচ আমরা একটু সাবধানতা অবলম্বন
করলেই অতিবাহিত হওয়া জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড’ই সঠিক ভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে কাঙ্খিত লক্ষ্যে
পৌঁছাতে পারবো।
তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক আমরা কিভাবে আমাদের মূল্যবান সময় গুলো সঠিক জায়গায়
ব্যবহার করবো-
১.প্রতিদিনের কাজের শিডিউল আগেররাতেই তৈরি করে ফেলুন:
তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে করা কাজগুলোর বেশির ভাগই অকৃতকার্য হয়ে থাকে। যেকোনো কাজের পূর্ব
পরিকল্পনা সে কাজটিকে অর্ধেক সম্পন্ন করে থাকে। সে কাজটি পুরোপুরি সম্পন্নও হয় সাবলীল ভাবে।
এতে সময়ের অপচয় রোধ হয়। তাই আগামীকাল আপনি কী কী কাজ করবেন সেগুলো নিদিষ্ট সময়
উল্লেখ করে আগের দিন রাতে ঘুমানোর আগে আপনার ডায়েরি অথবা মোবাইল নোটবুকে শিডিউল করে
রাখুন৷
আরো জানুন: র্ধৈয্য মানুষকে বদলে দেয়
এতে করে বেঁধে রাখা সময়টি আপনার কাজটিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে তাগিদ
দিবে। আর হ্যাঁ, প্রতিটি কাজ সম্পন্ন হবার সাথে সাথে শিডিউলে সেই লেখাটির পাশে ‘Success’ লিখে
রাখবেন যা আপনার পরবর্তী কাজটি সম্পন্ন করতে যথেষ্ট পরিমাণ আত্মবিশ্বাসের যোগান দিবে।
মোটকথা, সময় মেইনটেইন করে প্রতিটি কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করতে শিডিউলের কোনো বিকল্প নেই।
২.দিনের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো কাজ শুরুর আগে রাখুন:
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়তই কিছু কাজ থাকে যেগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কিছু কাজ থাকে
যেগুলো তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর ওপর পুরোপুরি
ফোকাস রাখতে সে কাজ গুলো শিডিউল লিস্টের শীর্ষে লিখে রাখুন৷ আমরা অনেকেই সকালে ঘুম ভাঙ্গার
পর বিছানা থেকে না উঠেই ফেসবুকে ঢুকে পড়ি। এর ম্যাসেজ, ওর ম্যাসেজ, বিভিন্ন নটিফিকেশন,
নিউজফিডে ঢুঁ মারা; মোটকথা দিনের শুরুতেই ঘন্টা খানেক সময় পুরোপুরিভাবে অপব্যয় করে ফেলি।
আরো জানুন: সফল ক্যারিয়ার গড়তে জেনে নিন ৭টি মূলমন্ত্র
অথচ, এ কাজগুলোর চাইতে আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজ কি পড়ে নেই আমাদের শিডিউলে? এ অভ্যাসটা
পরিহার করা আবশ্যক৷ নয়তো দিনের শুরুতেই আপনি আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর উপর
ফোকাসের ঘাটতি রেখেই কাজ শুরু করবেন। দিন শেষে সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলো সম্পন্ন করতে
অনেকটা পিছিয়ে পরবেন। তাই সবসময় চেষ্টা করবেন আগে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলো শেষ করতে।
এতে করে আপনার মস্তিষ্কে চাপ কমবে এবং ছোট ছোট কাজ গুলো খুব সহজেই সম্পন্ন করতে পারবেন।
৩. অপচয় হতে যাওয়া সময়ের সঠিক ব্যবহার করুন:
বর্তমান সময়ে রাস্তার যানজটের কারণে প্রায় প্রতিদিনই আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা যানবাহনের ভেতর
আটকে থাকি। এ সময়টুকু সত্যিই আমাদের জন্য নিশ্চিত অপচয় এবং ক্ষতিকর। এমনকি দীর্ঘ ভ্রমণেও
আমরা দীর্ঘ সময় অলসভাবে যানবাহনের ভেতরই কাটিয়ে দিই। অথচ আমরা চাইলেই এ সময়টাও
সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারি। আমাদের প্রতিদিনকার শিডিউলে এমন কিছু কাজ থাকে যেগুলোর জন্য
নির্দিষ্ট কোনো সময় বাঁধা থাকে না, দিনের যেকোনো সময় করলেই হয়। ঐ ধরনের কাজগুলো আমরা
আমাদের অপচয় হতে যাওয়া সময়টুকুর মধ্যে সম্পন্ন করতে পারি। যেমন ধরুন- আপনি বই পড়তে
পছন্দ করেন?
আরো জানুন: Bangladeshi Site ” Out source my job.com” এ্যাকাউন্টটি কিভাবে খুলবেন
কোথাও বের হবার সময় একটা বই সাথে নিয়ে নিলেন অথবা অনলাইন থেকে আপনার
পছন্দের বইটির পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করে আপনি আপনার স্মার্টফোন দিয়েই সময়টুকু কাজে
লাগিয়ে দিলেন৷ যারা নিউজ পেপার পড়তে পছন্দ করেন তারা নিউজ পেপার কিনে অথবা অনলাইন
থেকেই পড়তে পারেন। অনেকেই লিখতে পছন্দ করেন। তারা সেই সময়টুকু বাস, রিকশা বা গাড়িতে বসে
বসে আঙ্গুল ও মোবাইল ডিসপ্লের সংস্পর্শে মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখতে থাকুন মন যা চায়, যারা
গাড়িতে চড়েন ল্যাপটপে বসেও কিন্তু কাজ করতে পারেন৷ যানজট অথবা দীর্ঘ ভ্রমন; প্রতিটি সেকেন্ডের
মূল্য সীমাহীন তাই প্রতিটি সেকেন্ডই সঠিক কাজে ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। তবে রিকশায় অথবা
গাড়ি/বাসে জানালা খোলা রেখে মোবাইল ব্যবহারের সময় ছিনতাইকারি থেকে সতর্ক থাকবেন।
৪. একই ধরনের কাজগুলো পাশাপাশি সময়ে করার চেষ্টা করুন:
প্রতিদিনই আমাদের কিছু কাজ থাকে যেগুলো সাধারণত একই ক্যাটাগরির হয়ে থাকে। সে কাজ গুলো
ভিন্ন ভিন্ন সময়ে না করে আপনার শিডিউলে পাশাপাশি বা একই সময়ে যুক্ত করবেন। এতে করে সেই
একই ক্যাটাগরীর কাজগুলো আপনার কাছে সহজ মনে হবে এবং আপনি ভালোভাবেই তা সম্পন্ন করতে
পারবেন। যেমন, আপনার বসকে কাজের একটা লিখিত আপডেট দিতে হবে, সম্ভাব্য ক্লায়েন্টকে
আপনাদের অফিসের সার্ভিস সম্পর্কে জানাতে হবে এবং আপনি অনেক দিন ধরে চাচ্ছেন ফেসবুকে
আপনার পছন্দের একটা বিষয় নিয়ে সুন্দর একটা স্ট্যাটাস লিখতে।
আরো জানুন: সময়ের সঠিক ব্যবহার করবেন কিভাবে?
এগুলো ছাড়াও একটা সার্ভে তৈরি করতে হবে আপনার কোম্পানীর কাস্টমার ফিডব্যাকের জন্যে।
আপনি এখন কোনো একটি কাজ করার জন্য বাসায় আপনার পিসি নিয়ে বসলেন। এবং সবগুলো কাজ
একবারে করে পিসি রেখে দিলেন। এতে করে আপনার সময় বাঁচবে সাথে মস্তিষ্ক সেই একই বিষয়ে মত্ত
থাকার কারণে কাজগুলো সহজেই সম্পন্ন করা সম্ভব হয়৷
৫. একটি নির্দিষ্ট রুটিনে জীবনটাকে পরিচালনা করুন:
“রুটিন” আপনার দৈনন্দিন জীবনকে গোছালো এবং প্রাণবন্ত করে তুলতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করবে। একটি নির্দিষ্ট ও কার্যকরী রুটিনের দ্বারাই আপনি আপনার জীবনটাকে নিজের মতো করে
গুছিয়ে নিতে পারবেন। প্রথমত, আপনি আপনার সুবিধা মতো একটি রুটিন তৈরি করবেন৷ রুটিনটি
হবে সাধারণত আপনার দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কাজগুলোকে ঘিরে, যে কাজ গুলো আপনাকে
প্রতিদিন করতে হয়৷ যেমন- আপনি প্রতিদিন কতক্ষণ আপনার পড়ালেখায় বা অফিসে সময় দিবেন,
আগামীকাল কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা দিন আছে কিনা, পরিবার ও বন্ধুদের কতোটুকু সময় দিবেন ।
আরো জানুন: অনলাইনে আয়ের বতর্মান অবস্থা জেনে নিন ।
এমনকি আপনি প্রতিদিন কতোটুকু সময় অনলাইনে ব্যয় করবেন এসব কিছুর জন্যই নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ
রাখবেন এবং তা যথাসম্ভব মেনে চলার চেষ্টা করবেন। এভাবেই একটা সময় তা অভ্যাসে পরিণত হয়ে
যাবে। রুটিনের আওতায় থাকা যেকোনো কাজই আপনার কাছে সহজ মনে হবে। জীবন এগিয়ে যাবে
আপনার মনের মতো করে।
৬. একাধিক কাজে একই সাথে মনোনিবেশ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন:
আমরা অনেকেই মনে করি একই সময়ে একাধিক কাজ করতে পারা একটি ইতিবাচক গুণ। কিন্তু
আমাদের এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল৷ ‘University of Michigan’ এর এক গবেষক আবিষ্কার
করেছেন যে- একজন মানুষ যখন একই সময়ে দুই বা ততোধিক কাজ করার চেষ্টা করে তখন তার
প্রোডাক্টিভিটি কমপক্ষে ৪০% কমে যায়৷ এবং সম্পন্ন হওয়া কাজ গুলোর মধ্যেও ত্রুটি থাকার সম্ভবনা
থেকে যায়৷ আপনি হয়তো ভাবছেন মাল্টিটাস্কিং এর ফলে আপনি খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন। একই সাথে
কাজ, ফেসবুকিং, ফোনালাপ, ইউটিউবিং সবই করছেন । এমনকি নিজেকে নিয়ে হয়তো গর্ব বোধ
করেন।
আরো জানুন: 10 টি জিনিস আপনি কিনতে পারবেন না।
মূলত আমাদের ব্রেইন এতকিছু একইসাথে সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে কোনো
কাজেরই গুণগত মান বজায় থাকে না। অনেক সময় একই সাথে একাধিক কাজ করতে গিয়ে কোনো
একটি কাজে ভুল হয়ে যায়। পুনরায় সে কাজটি করতে আবারও সময়ের প্রয়োজন হয়। তাই একসাথে
একাধিক কাজ নয়; প্রতিটি কাজ আলাদা আলাদা সময়ে করলে মস্তিষ্ক ঐ একটি কাজের উপরই পরিপূর্ণ
ফোকাস রাখতে পারে। এতে সেই কাজটি ভুল হবার সম্ভবনা একেবারই কম থাকে। ফলে শতভাগ
মানসম্মত ও পরিকল্পিত সময়ের মধ্যেই কাজগুলো সম্পন্ন করা যায় সহজেই।
৭.কাজের ফাঁকে কিছু সময় বিরতি নিন:
একটানা প্রতিটি ঘন্টা কাজের পেছনে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাইলেও পারবেন না। জোর করে যদি
দিয়েও থাকেন, একসময় আপনার মাথা ধরে আসবে। তাই ব্রেনকে ভালোভাবে কাজে লাগানোর জন্য
নিয়মিত বিশ্রাম এবং বিরতির খুবই প্রয়োজন। এতে করে আপনার ব্রেন সতেজ হয়ে তার পরবর্তী
কাজটি আরও সুন্দর ও সফলভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হবে। তাই আপনি আপনার শিডিউলে
সারাদিনের প্রতিটি কাজের মাঝে যথেষ্ট পরিমাণ সময় বিরতি রাখবেন। সে সময়টুকু অন্য কাজে
মনোনিবেশ করবেন না। এমনকি ফেসবুক, ইমো, ওয়াটসঅ্যাপও না। একটি কাজ শেষ হবার পর
আরেকটি কাজের ফাঁকে পাঁচ-দশ মিনিট বিরতি থাকলে আপনার পরবর্তী কাজের জন্য মস্তিষ্ক পুরোপুরি
প্রস্তুত থাকবে। ফলে সারাদিনের কাজগুলোও ভালো ভাবে সম্পন্ন হবে।
আরো জানুন: কাজ এখনই শেষ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন
সবশেষে, আমরা সবাই জানি- “সময় এবং স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না” তাই পরিকল্পিতভাবে
সময়ের সর্বোচ্চ ও সঠিক ব্যবহার করুন। দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি কাজের পূর্ব পরিকল্পনা, শিডিউলের
মাধ্যমে প্রতিটি সেকেন্ডের যথেষ্ট মূল্যায়ন এবং প্রতিটি কাজের সফল আউটপুট আপনার জীবনে বয়ে
আনবে কাঙ্ক্ষিত সফলতা। আপনার জীবন হবে সুন্দর, সাবলীল ও উপভোগ্য।