আরো জানুন: নিজের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বদলাতে হবে ১০টি অভ্যাস।
যেকোনো কাজে সাফল্যের পূর্বশর্ত হলো মনোযোগ দিয়ে কাজ করা। প্রতিনিয়ত আমাদের অসংখ্য কাজ
করতে হয়। কিন্তু সবসময় আমরা কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে পারিনা। কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে
না পারলে শুধু কর্মদক্ষতা কমে যায় না, বরং কাজের মান,কাজ করার ইচ্ছা এবং আগ্রহ ধীরে ধীরে
কমতে শুরু করে। ফলে কোনো কাজই ঠিকঠাকভাবে করা হয়ে উঠেনা। দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করা
আমাদের অনেকের জন্য হয়ে উঠেনা। কিন্তু কিছু কৌশল অবলম্বন করলেই আমরা কাজে মনোযোগ ধরে
রাখতে পারি। আর মনোযোগ সহকারে কাজ করলেই সে কাজে সফলতা ত্বরান্বিত হয়।
তাহলে দেরি না করে চলুন জেনে নিই কোন কোন কৌশল অবলম্বন করলে আমরা কাজে মনোযোগ ধরে
রাখতে পারবো।
আরো পড়ুন:
একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার কিছু জরুরী ও কার্যকরী টিপস সর্ম্পকে আলোচনা । |
২ টি গুন্ আপনার জীবন কে বদলে দিতে পারে । |
র্ধৈয্য মানুষকে বদলে দেয় |
টাকা কে না চায় , তার জন্য একটু পরিশ্রম করতে হয় । |
১.কাজের মাঝে কিছু বিরতি নিতে ভূল করবেন না:
একটানা অধিক সময় কাজ করলে কাজে মনোযোগ না থাকারই কথা। কারণ একটানা অনেক সময়
কাজ করলে স্বাভাবিকভাবে আমাদের মানব মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে যায়। কাজের গতি কমে যায়। তাই কাজের
গতি ঠিক রেখে মনোযোগ ধরে রাখার জন্য কাজের মাঝে ৪-৫ মিনিটের বিরতি নিন। একটু হাঁটা চলা
করুন। চা পান করুন বা সামান্য নাশতা করতে পারেন। আলো বাতাসে গিয়ে বুক ভরে নিশ্বাস নিতে
পারেন। এতে সতেজতা আসবে। বিরতি শেষে কাজ শুরু করলে কাজে নতুন প্রাণ ফিরে পাবেন।
২.কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করে তারপর কাজ করুন:
যেকোনো কাজ শুরু করার আগে সে কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করাটা জরুরি। ঠিক কতো সময়ের
মধ্যে কাজটি শেষ করতে হবে তা যদি আগে থেকে জানা যায় ,তাহলে কাজের গতি বাড়ে। সময় বেঁধে
দেয়া থাকলে আমাদের অবচেতন মন একটা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটা শেষ
করার জন্য মন তাড়াহুড়া করে। মনে রাখতে হবে- কাজের মধ্যে বারবার ঘড়ি দেখলেও মনোযোগে বিঘ্ন
ঘটে। কাজের তালিকা আগেই তৈরি করে আগামীকাল কি কি কাজ করতে হবে তা আগেই ঠিক করে
নিতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ তালিকার প্রথম দিকে রাখতে হবে। তারপর একটু কম গুরুত্বপূর্ণ
কাজগুলো। এভাবে পর্যায়ক্রমে তালিকা তৈরি করলে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ লিস্টে রাখা বাকি থাকবেনা।
যদি কোনো কারণে একদিন আগে কাজের শিডিউল তৈরি করা সম্ভব না হয়; তাহলে ঘুম থেকে উঠে
সকালেই কাজের তালিকা তৈরি করার কাজটা শেষ করতে হবে। কোন কাজটা করতে কতোটুকু সময়
লাগবে সেটাও লিখে রাখতে হবে।আগামীকাল কী কী কাজ করতে হবে তা যদি আগেই লিস্ট করে রাখা
যায়, তাহলে কাজের গতি ঠিক থাকে। মনোযোগও ঠিক থাকে। অন্যদিকে সময়ও বাঁচানো যায়।
৩.সামাজিক মাধ্যম থেকে নিজেকে দূরে রাখন:
বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যেন আমাদের জীবনের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে।
কিছু সময় পর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশ করতে না পারলে আমরা অস্থির হয়ে যাই। কিন্তু
কাজের সময় ঘন ঘন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশ করলে কাজে কোনোভাবেই মনোযোগ থাকবে
না । তাই কাজ করার সময় যথা সম্ভব ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসআ্যপ, ভাইবার, ইমো প্রভৃতি থেকে
সম্পূর্ণ দূরে থাকতে হবে। তাই হাতের স্মার্টফোনটিও একটু দূরে রাখতে হবে। যাতে ঘন ঘন চোখে না পড়ে
আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নোটিফিকেশন চেক করার জন্য ব্যস্ত হয়ে না উঠি।
৪.কাজের অনুপ্রেরণা খুজে বের করুন:
যেকোনো কিছু করার জন্য অনুপ্রেরণার প্রয়োজন হয়। যে কাজটি কারতে চান, সেটি করে আপনার কী
লাভ হবে? কেন কাজটি করতে চান? এগুলো আগে থেকে ভেবেই তার মধ্যে যেকোনো অনুপ্রেরণা খুঁজুন।
কাজের জন্য অনুপ্রেরণা পেলে কাজটি করার জন্য আপনার আগ্রহ এবং উদ্যম বেড়ে যাবে। আর যখনই
আপনার কাজের আগ্রহ বেড়ে যাবে, তখনই কাজে পূর্ণ মনোযোগ ধরে রাখতে পারবেন আর কাজটি দ্রুত
সম্পন্ন করা আপনার জন্য সহজ হবে। তাই যেকোনো কাজ আগ্রহ এবং ভালোবাসার সাথে সম্পন্ন
করুন।
৫.শরীর সবর্দা সুস্থ রাখুন:
মানব জীবনে শরীর সুস্থ রাখা সুখি হওয়ার অন্যতম নিয়ামক। সুস্থ না থাকলে যেন পুরো জীবনটাই
বৃথা। সুস্থতা যেমন জীবনের প্রতিটি পদে পদে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এটি কাজে মনোযোগ ধরে রাখারও
অন্যতম শর্ত। শরীর সুস্থ না থাকলে কোনো কাজেই মন বসানো যায় না। তাই শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য
পরিমিত খাবার খান,পানি পান করুন, ব্যায়াম করুন এবং পরিমিত পরিমাণে ঘুমান। এছাড়া শরীর সুস্থ
রাখার জন্য অনান্য উপায়গুলোও অবলম্বন করতে পারেন। মনে রাখতে হবে- দেহ ঘড়িটা ঠিকমতো
সায় দিলে মন ঘড়িটাও সঠিকভাবে সংকেত দিবে।
৬. কাজের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে:
একটা কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি যে,ভালো পরিবেশে ছেলে-মেয়েদেরকে বড় হতে দিন।তাহলে ছেলে-
মেয়েদের উপর এর প্রভাব পড়বে।তারাও ভালো মানুষ হয়ে উঠবে। ঠিক তেমনি ভালোভাবে কোনো
কাজ সম্পন্ন করার জন্য সে কাজের অনুকূল পরিবেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। কাজের জন্য অনুকূল পরিবেশ
যতোটা থাকবে, কাজটা ততো অল্প সময়ে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সহজ হবে। তাই কাজ করার সময়
কাজের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করুন। কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস পাশে রাখুন।
৭.একসাথে একাধিক কাজ থেকে বিরত থাকুন:
আমরা অনেকেই একসাথে একাধিক কাজ করতে যাই। ফলে কোনো কাজই ঠিকঠাকমত হয়ে ওঠেনা।
তাই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সময় সেই নির্দিষ্ট কাজটিই এক মনে করতে হবে। অন্য কোনোদিকে মন দেয়া
যাবেনা। কম্পিউটার একসাথে একাধিক কাজ করতে পারলেও মানুষের মস্তিষ্ক একাসাথে একাধিক কাজ
করতে পারে না। আর যদি কেউ সেটা চেষ্টাও করে তবে জেনে রাখুন, একসাথে একাধিক কাজ করলে
কোনো কাজেই ফোকাস ঠিক রাখা যায়না। তাই যে কাজটি করছেন শুধুমাত্র সেই কাজটিতে মনোযোগ
ধরে রাখুন। একটা কাজ শেষ হওয়ার পর অন্য কাজে হাত দিন।
আরো কিছু কৌশল সর্ম্পকে আলোচনা:
কাজে মনোযোগ ধরে রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন। প্রচুর পানি পান করুন। স্বাস্থ্যসম্মত এবং
পরিমিত খাবার খান। আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন প্রার্থনা করুন। মন সতেজ থাকলে যেকোনো
কাজে মনোযোগ দিতে তো আপনার মনই সায় দিবে। তাই আজ থেকেই মনোযোগ দিয়ে কাজ করুন আর
হয়ে উঠুন মনোযোগী একজন মানুষ।