আয়রন সমৃদ্ধ খাবার

হিম ও নন-হিম উভয় ধরনের আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা নিচে দেয়া হল-

* যকৃত * মাংস (চর্বি ও চামড়া ছাড়া) * সামুদ্রিক খাবার * মসুর ডাল ও মটরশুটি * শুকনা ফল যেমন- আলু-বোখারা, ডুমুর ও কিশমিশ * বাদাম

শিমের বিচি * ডিম * সয়াবিন * গুড়*ছোলা*ডালজাতীয় খাবার *কাজুবাদাম**কিশমিশ।

এছাড়া গাঢ় সবুজ রঙের শাকসবজি আয়রনের খুব ভালো উৎস।

* পালং শাক * ব্রোকলি * কচু শাক * লাল শাক*কুমড়ার বিচি **সিদ্ধআলু**টমাটো**মটরশুঁটি**

শিম ও মটরশুঁটির বিচি**কালাই**মটর কিংবাং ছোলায় রয়েছে আয়রন, সয়াবিন, ইত্যাদি।

বিস্তারিত আলোচনা হলো:

১. মাংস :

রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ দ্রুত বাড়াতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রাণিজ প্রোটিন। সকল ধরনের লাল মাংস; যেমন গরুর মাংস, খাসির মাংস এবং কলিজা আয়রনের সবচেয়ে ভালো উৎসগুলোর একটি। আয়রন হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য জরুরি। মুরগির মাংস লাল মাংস না হলেও তাও দেহকে বিশাল পরিমাণে আয়রন সরবরাহ করতে পারে।

২. ফল :

সবধরনের রসালো সাইট্রাস ফল, যেমন, আম, লেবু এবং কমলা ভিটামিন সি-র সবচেয়ে ভালো উৎস। আর দেহে আয়রন দ্রুত শুষে নেওয়ার জন্য ভিটামিন সি সবচেয়ে জরুরি। এর ফলে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের গতিও বাড়ে। স্ট্রবেরি, আপেল, তরমুজ, পেয়ারা এবং বেদানাতেও প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে।

৩.ডালিম :

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল ডালিম। এতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন আছে, যা দেহে রক্ত প্রবাহ সচল রেখে দুর্বলতা, ক্লান্ত ভাব দূর করে থাকে। নিয়মিত ডালিম খেলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়ে যায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

.দুধ:

প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও প্রোটিন যোগায়। দুধে খুব বেশি পরিমাণে আয়রন না থাকলেও এতে প্রায় সব রকমের ভিটামিন বি আছে। এছাড়াও দুধে আছে পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম। এই খাদ্য উপাদান গুলো রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে রক্ত শূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। তাই রক্ত শূন্যতা রোগীদের জন্য নিয়মিত অন্তত এক গ্লাস করে দুধ খাওয়া উপকারী।

৫. সামুদ্রিক খাদ্য :

সামুদ্রিক খাদ্যে আয়রন এবং অন্যান্য খনিজ পুষ্টি উপাদান আছে প্রচুর পরিমাণে। সুতরাং অ্যানেমিয়া বা রক্তশুন্যতার রোগীদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অয়েস্টার, ক্লামস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর সামুদ্রিক খাদ্য রাখতে হবে।

৬. কলাই বা শুটিজাতীয় খাদ্য :

সয়াবিন, ছোলা এবং বিনজাতীয় খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। সয়াবিন বর্তমানে সবজিভোজীদের জনপ্রিয় একটি খাদ্য। এ থেকে সুস্বাদু সব খাবার তৈরি হয় এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায় দ্রুতগতিতে।

৭. পূর্ণশস্যজাতীয় খাদ্য :

চাল, গম, বার্লি এবং ওটস রক্তশুন্যতায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য চমৎকার আয়রন সমৃদ্ধ খাবার। এসব খাবার প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেটসও সরবরাহ করে। লাল চাল বিশেষ করে সব বয়সীদের জন্যই আয়রনের একটি সমৃদ্ধ উৎস বলে গণ্য হয়।

৮. সবজি :

প্রতিদিন তাজা সবজি খেলে আয়রন ও অন্যান্য খনিজ পুষ্টি এবং নানা ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি মিটবে। আলু, ব্রকলি, টমেটো, কুমড়া এবং বিটরুট আয়রনের ঘাটতি মেটাতে সক্ষম। এছাড়া স্পিনাক সহ অন্যান্য সবজিও বেশ আয়রন সমৃদ্ধ।ফুলকপির ডাটাতেও আয়রন আছে প্রচুর। তবে উদ্ভিজ্জ খাবার থেকে আয়রন পেতে হলে শাক বা কপির সঙ্গে ভিটামিন সি’জাতীয় খাবারও খেতে হবে।

.পালং শাক :

ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, বি ৯, ই, সি, বিটা কারটিন এবং আয়রন রয়েছে পালং শাকে, যা রক্ত তৈরি করে থাকে। আধা কাপ পালং শাক সিদ্ধতে ৩.২ মিলিগ্রাম আয়রন আছে যা নারীদের দেহে ২০% আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। এক কথায় এ শাককে সুপার ফুট বলা হয়।

০.টমেটো :

টমেটো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সবজি। টমেটোতে বিটা ক্যারটিন, ফাইবার, এবং ভিটামিন ই আছে। এ সবজি আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে।

১১. ডিম :

ডিম হলো আরেকটি জনপ্রিয় খাদ্য যাতে আছে উচ্চমাত্রার আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। ডিমের হলুদ কুসুমে আছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পুষ্টি এবং ভিটামিন। আর এ কারণেই দুর্বল লোকদেরকে প্রতিদিন সেদ্ধ ডিম খেতে বলা হয়।

১২. শুকনো ফল :

কিসমিস, অ্যাপ্রিকট বা খুবানি এবং খেজুরে আছে প্রচুর আয়রন, ভিটামিন এবং আঁশ। এসব খাবার খেলে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও বাড়ে দ্রুতগতিতে।

১৩. বাদাম :

যে কোনো ধরনের বাদামই মানবদেহের জন্য উপকারী বলে বিবেচিত হয়। যে কারণে তরুণদেরকে কাজু বাদাম , হিজলি বাদাম, চীনা বাদাম এবং আখরোট খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে দ্রুতগতিতে।

. ডার্ক চকোলেট :

শিশুদের প্রিয় খাবার ডার্ক চকোলেটেও থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। আর এ কারণেই এমনকি ডাক্তাররাও ডার্ক চকোলেট খেতে বলে।

৫.মধু:

মধু আয়রনের একটি ভালো উৎস। আয়রন ছাড়াও মধুতে কপার ও ম্যাঙ্গানিজ আছে। এই উপকরন গুলো শরীরে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে হিমোগ্লোবিন প্রস্তুত করতে সহায়তা করে। তাই রক্তশূন্যতা কমাতে মধু একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।

এই সবগুলো খাদ্যই দেহে আয়রনের ঘাটতি মিটিয়ে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ দ্রুতগতিতে বাড়ায়। সুতরাং নিয়মিতভাবে এই খাবারগুলো খেয়ে দেহে রক্তের পরিমাণ, জীবনী শক্তি এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে থাকুন। 

Leave a Comment